দেশজুড়ে

তিন শিশুকে যুবক দেখিয়ে মামলা!

মামলার আসামি জীবন বেপারীর বয়স ১০ বছর ৭ মাস, বায়েজিদ বেপারীর বয়স ১১ বছর ১১ মাস ও তার ভাই সাজিদ বেপারীর বয়স ৮ বছর ৫ মাস। অথচ এদের তিনজনের বয়সই ১৮ এর ওপরে দেখিয়ে একটি খুনের চেষ্টাসহ চুরির অভিযোগ করে রাজৈর থানায় মামলা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। মঙ্গলবার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগা মাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এদের তিনজনের বাড়িই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের দূর্গাবর্দি গ্রামে।

সোমবার দুপুরে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে তিন শিশু স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করে। পরে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার।

দায়ের হওয়া মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জেলার রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের দূর্গাবর্দি গ্রামের শহিদুল বেপারী ও রুহুল বেপারীর সঙ্গে একই বাড়ির টুটুল বেপারীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে টুটুল বেপারীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ২ মে সন্ধ্যা ৭টায় ৯ জনের নামসহ অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করে রাজৈর থানায় অভিযোগ করেন।

মামলায় শহিদুল বেপারীর দুই শিশুপুত্র বায়েজিদ বেপারী ও সাজিদ বেপারী এবং রুহুল বেপারীর শিশুপুত্র জীবন বেপারীকে আসামি করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা বেআইনিভাবে অবৈধ বাধাদান ও অবরোধ করে হুমকিসহ খুন করার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে, পিটিয়ে সাধারণ ও গুরুতর জখমসহ চুরি করার অপরাধ করেছে। রাজৈর থানার ওসি ৬ মে বাদীর অভিযোগটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন এবং একই থানার এসআই শরীফ আশিকুর রহমানকে অভিযোগটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

মামলার নথি থেকে আরো জানা যায়, মামলার ৯ আসামির মধ্যে জীবন বেপারী মামলার ৪ নম্বর আসামি। এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৮ বছর। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনুসারে তার জন্ম তারিখ ২ অক্টোবর ২০১১। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে ঘটনার দিন জীবন বেপারীর বয়স ১০ বছর ৭ মাস। ৮ নম্বর আসামি বায়েজিদ বেপারীর বয়স এজাহারে বলা হয়েছে ২২ বছর কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনুসারে তার জন্ম তারিখ ২ জুন ২০১০। সে হিসাবে ঘটনার দিন তার বয়স ১১ বছর ১১ মাস। এছাড়া সাজিদ বেপারী যাকে এজাহারে ৯ নম্বর আসামি করা হয়েছে, জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৩। সে হিসাবে ঘটনার সময় তার বয়স দাঁড়ায় ৮ বছর ৫ মাস ২৯ দিন।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, মামলার বাদী ও আসামিরা পরস্পর আত্মীয় ও একই বাড়িতে পাশাপাশি বসবাস করেন। অসৎ উদ্দেশ্যে ও ইচ্ছাকৃতভাবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তিনটি শিশুকে মামলার আসামি করা হয়েছে। যা আইনগত অন্যায়। এমন শিশুদের আসামি করায় আদালত পাড়ায় তীব্র সমালোচনা উঠেছে।

তবে শিশুকে যুবক দেখিয়ে আসামি করার বিষয়ে মামলার বাদী মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি আদালত বিষয়টি সমাধান করবেন বলে সংবাদ প্রকাশ না করার হুমকি দেন।

এ ব্যাপারে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, যে কেউ থানায় মামলা দিতে পারে। পরে মামলাটি তদন্ত করে যদি দেখা যায় আসামিরা শিশু বা বয়স কম তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শিশু-কিশোর আদালতে মামলাটি দেওয়া হবে। আর পূর্ণ তদন্তে কেউ দোষী না হলে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ যাবে। এক্ষেত্রে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নাসিরুল হক/এফএ/জেআইএম