দেশজুড়ে

জিও ব্যাগে ‘মলিন’ কুয়াকাটার সৌন্দর্য

সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি, একসঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সৈকতে গত দুই যুগের বেশি সময়ে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা।

তবে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে দিন দিন সৈকতের প্রস্থ ছোট হওয়া, বালু ক্ষয়, বনাঞ্চল ধ্বংস, বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন এবং সৈকত রক্ষার নামে বিভিন্ন অনুপযোগী কার্যক্রমে সৌন্দর্য হারাচ্ছে অপরুপ এ সৈকত। এতে পর্যটক হারানোর শঙ্কা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।

সৈকতের প্রস্থ বৃদ্ধি ও বালু ক্ষয় রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘সৈকত রক্ষা প্রকল্পের’ আওতায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব স্থাপনে সৈকত রক্ষা তো হচ্ছেই না বরং নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ- এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি সৈকত রক্ষায় জিও ব্যাগ ও জিও টিওব প্রজেক্টে সৈকত রক্ষায় সফলতা মিলেছে।

সৈকতের বর্তমান চিত্র পূর্বের তুলনায় অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মতো। এভাবে সৌন্দর্য বিলীন হলে ভ্রমণ পিপাসুরা কুয়াকাটায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে মন্তব্য করেন সাতক্ষীরা থেকে আসা পর্যটক শেখ ইমরান আলী।

লায়লা জাহান নামের অপর এক পর্যটক আক্ষেপ নিয়ে জাগো নিউজকে জানান, সৈকতের জিরো পয়েন্টে গোসলে নামার সময় জিও ব্যাগে পা আটকে চামড়া ছিলে গেছে। এমন হলে পর্যটকরা কেন আর ঘুরতে আসবে?

নক্ষত্র ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আলমাস জাগো নিউজকে জানান, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ সৈকত। তবে দুঃখের বিষয় সৈকতই আজ বিলীনের পথে। সৈকত রক্ষায় যে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে তা অপরিকল্পিত। কারণ এ ধরনের পরিকল্পনা চলতে থাকলে কিছুদিন পরে সৈকতের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

উপকূলীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, উপকূলীয় অপার সম্ভাবনা কুয়াকাটা দিন দিন পেছনে চলে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কেননা এখানে বিচে সমস্যা, ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা, ভাঙন তীব্রতা, বিচ সংরক্ষণের কার্যকরী কেনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

তিনি আরও জানান, এই বিচ নিয়ে পর্যটকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে, অনেক আশা নিয়ে পর্যটক এলেও পরে আশাহত হয়। আশাটাকে ধরে রাখতে বিচকে সংরক্ষণ করা দরকার। একটি পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের বিচে পরিণত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকতের প্রস্থ বৃদ্ধির জন্য জিরো পয়েন্টের কয়েক স্থানে জিও ব্যাগ-জিও টিউব স্থাপন করেছে। যা জোয়ারের সময় স্বাভাবিক পানির ১০-১৫ ফুট নিচে থাকে। চলমান প্রকল্পে জিও ব্যাগ-জিও টিউব বালু দিয়ে ভরা হয়, এতে সৈকত কিংবা সৌন্দর্য কিছুই রক্ষা হচ্ছে না বরং ধ্বংস হচ্ছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সৈকত রক্ষায় ২০১৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনবার জিরো পয়েন্টের পূর্ব ও পশ্চিমে দুই কিলোমিটারে ওভেন, নন-ওভেন জিও টিউব ও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। যার খরচ প্রথমবার দুই কোটি ৫০ লাখ, দ্বিতীয়বার তিন কোটি ৫০ লাখ ও সর্বশেষ ২০২২ জুনে শেষ হওয়া দুই কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রতি বারই সৈকত রক্ষায় এগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরও জানান, আগামী বছর ‘কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন' নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড নান্দনিক এ সৈকত রক্ষায় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এরই মধ্যে ১২শ কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে ডিজাইন ও প্রাক্কলন তৈরি করে প্রস্তাবনা আকারে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে আগে জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব পাশে ৪৯০ মিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে যা ভাঙন ঠেকাবে। ফলে পর্যটকরা অবাধ বিচরণের সুযোগ পাবে।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এএইচ/জেআইএম