স্বাস্থ্য

‘মানুষ মানুষের জন্য’

‘মানুষ মানুষের জন্য’

একটি জনবহুল গরিব দেশ যেখানে নুন আনতে তেল থাকে না সেখানে রোগব্যাধি এক অভিশপ্ত মুহূর্ত। দেশের হাসপাতালগুলো তার ধারণক্ষমতার বাইরে সেবা দিয়ে চলেছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলছেন সেবা দেওয়ার জন্য। এদিকে কিছু দুষ্টু লোক সরকারকে হেনস্তা করতেও উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু তারা ভাবছে না যে জনগণই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Advertisement

সব কিছুর পরও শিল্পী (জীবন-মৃত্যুর ক্ষণ গুনতে থাকা শিল্পী, মোবারকপুর গ্রাম, নহাটা ইউনিয়ন, মহম্মদপুর উপজেলা, মাগুরা জেলার এক অসহায়। সে না বাঁচলে কী হবে তার শিশু কন্যাটির!) যথাযথ সাহায্য পেয়েছে যা দেশের অবকাঠামোর সাধ্যের বাইরে। সোনার বাংলা আস্তে আস্তে সবার প্রচেষ্টায় লাখো লাখো শিল্পীর মতো দরিদ্র অসহয় রোগাক্রান্ত জীবনকে রোগমুক্ত করতে সাহায্য করবে এমনটি কামনা করি।

একই সঙ্গে সবার আন্তরিকতা দরকার এ ধরনের মানবিক কাজে পাশে থাকার জন্য। যার যার জায়গা থেকে যদি সবাই কমবেশি একটু হাত বাড়ান তাহলে আমরা অনেকের জীবনে একটু স্বস্তি দিতে পারি। দরকার শুধু অনুভূতির। চল্লিশ বছর দেশের বাইরে থেকেও আমার যদি সেটা থাকে, কেন থাকবে না অন্যদের! অবশ্যই থাকবে এ আশা আমি করি।

দেশে রয়েছে শাহাজাহানের মতো হাজারও দেশ দরদি। যারা প্রতিনিয়ত নিজের খেয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে চলছে। (দৈনিক শিক্ষা বলে যে একটি কথা রয়েছে তার সমন্বয়ে যখন পুঁথিগত শিক্ষার আবির্ভাব ঘটে এবং সেই দৈনিক শিক্ষা যদি মানব কল্যাণে সুন্দর ও সময়োপযোগী হয় এবং তা যদি ‘ক্রিয়েট সাম ভ্যালু ফর ম্যানকাইন্ড’ তখনই এই দৈনিক শিক্ষার সঙ্গে পুঁথিগত শিক্ষার মিশ্রণের প্রতিফলনকে বলতে পারি সুশিক্ষা। তাই আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, শুধু শিক্ষা নয় ‘সুশিক্ষাই হোক জাতির মেরুদণ্ড’।

Advertisement

এখন প্রশ্ন, কী করে পাব এই সুশিক্ষা? আছে কি আমাদের মাঝে এমন কোনো উদাহরণ যা তুলে ধরার মতো? অবশ্যই আছে। ছেলেটির নাম শাহজাহান মিয়া, মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের এক পরিচিত নাম। সে পেশায় একজন ব্যাংকার, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সে তার স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোন এবং তাদের পরিবার নিয়ে দিব্বি ম্যানেজ করে চলছে একটি স্বচ্ছল ও সুখী জীবন।

বসে বসে অন্ন ধ্বংস না করে বরং নিজের রোজগারে নিজের পরিবার নিয়ে সুন্দর ও সাধারণ জীবন যাপন তার পেশাগত শিক্ষা এবং কর্মের সমন্বয়ে দৈনিক শিক্ষার ওপর সেরা প্র্যাকটিস করে চলছে। সে তার পেশাগত কাজের আগের এবং পরের সময়টুকু ব্যবহার করে চলছে শিক্ষাকে আরও তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার কাজে। সেজন্য সে গ্রামের অবহেলিত ও অসহায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে ক্লাসের পাশাপাশি আলাদাভাবে ক্লাস করিয়ে তাদের শিক্ষার ক্রমোন্নয়ন করছে। সে বি-না বেতনে এসব শিক্ষার্থীদের পড়াতে এগিয়ে এসেছে এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে অন্যকেও।

যারা সত্যিকারের ভালো মানুষ তারা হয়ত এমনই হয়! দেশের প্রতিটি গ্রামে যদি তার মতো হাজারো মানুষের দৈনিক শিক্ষার প্রতিফলন হয়, তাহলে অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করা এবং ধর্ম, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি, বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করা ও একই সঙ্গে ভন্ডামি ও অনৈতিকতা থেকে বেরিয়ে এসে দেশ ও জাতির খেদমত করা সম্ভব।

আমাদের প্রতিদিনের সেই কমিটমেন্ট যা আমাদের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, শাহজাহান কি তাহলে তার এই প্রতিশ্রুতির ওপর দৈনিক শিক্ষার সেরা প্র্যাকটিস করে চলছেন? যাই হোক না কেন, শাহজাহানের মতো মানুষ সমাজে প্রয়োজন যারা পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে দৈনিক শিক্ষার বেস্ট প্র্যাকটিসের সমন্বয় ঘটিয়ে সুশিক্ষার জন্য কাজ করছে।

Advertisement

অরাজকতা, কুশিক্ষা ও দুর্নীতি ধ্বংস হোক, মানবতা এবং দৈনিক শিক্ষার জয় হোক)। আমরা এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ হাতে নিয়েছি তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি, এবারও পারব ইনশাল্লাহ। সবাইকে অনুরোধ করছি যেভাবে সম্ভব একটু সহানুভূতি দেখান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ শিল্পীর অপারেশন হবে। সবাই তার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com

এমআরএম/জেআইএম