আন্তর্জাতিক

১০০ কোটি বছরে যেভাবে বদলে গেলো পৃথিবী, দেখুন ৪০ সেকেন্ডে

১০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর চেহারা কেমন ছিল? কীভাবে আমরা বর্তমান বিশ্বের মানচিত্র পেয়েছি? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে চোখ রাখতে হবে টেকটোনিক প্লেটগুলোর গতিবিধির দিকে। আমাদের আঙুলের নখ যে গতিতে বড় হয়, প্রায় সেই গতিতেই নড়াচড়া করে পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো। কিন্তু যদি এর গতি বাড়িয়ে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়, কেমন হবে তা দেখতে? অবশ্যই চমকপ্রদ!

আজ অব্দি টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি নিয়ে যতগুলো মডেল তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা পরিপূর্ণ একটি মডেল সামনে এসেছিল ২০২১ সালে। এতে টেকটোনিক প্লেটগুলোর ধাক্কা খাওয়া, ছড়িয়ে পড়া, তারপর একত্রিত হওয়া, ফের টুকরো টুকরো হয়ে দূরে সরে যাওয়া... সব কিছুই দেখা যায় মাত্র ৪০ সেকেন্ডে।

কোটি কোটি বছর ধরে টেকটোনিক প্লেটগুলো অবিরাম নড়াচড়া করছে। এদের স্থানান্তরের কারণেই আজকের চেহারা পেয়েছে ওপরের ভূমি, অর্থাৎ আমাদের মহাদেশ ও দেশগুলো।

টেকটোনিক প্লেট আসলে কী? এটি হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা পাথরের বিশাল বিশাল খণ্ড। তাদের নড়াচড়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়, ভূমিকম্প ঘটে, প্রাণীদের বাসস্থান বদলে যায়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, ধাতু তৈরি করা হয়। অর্থাৎ টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে প্রভাবিত হয় গোটা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।

ইউনিভার্সিটি অব সিডনির পিএইচডি গবেষক ও ভূ-বিজ্ঞানী মাইকেল টেটলি ইউরো নিউজকে বলেন, প্রথমবারের মতো সব সীমানাসহ টেকটোনিক প্লেটগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ মডেল তৈরি করা হয়েছে। মানুষের টাইমস্কেল অনুসারে, জিনিসগুলো (টেকটোনিক প্লেট) প্রতি বছর এক সেন্টিমিটার করে সরে যায়। কিন্তু এখানে ভিডিওটি দেখলেই বোঝা যায়, আমাদের মহাদেশগুলো পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। যে অ্যান্টার্কটিকাকে আজ আমরা বসবাসের অযোগ্য বরফাচ্ছাদিত রূপে দেখি, এটি কিন্তু একসময় বিষুবরেখা বরাবর একটি চমৎকার অবকাশযাপনের গন্তব্য ছিল।

পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো যখনই নড়াচড়া করে, তাদের ওপরের ভূমি বা দেশ ও মহাদেশগুলো সরে যায়। তাদের চারপাশের জিনিসগুলোও নড়াচড়া করে। তখন বোঝা যায়, এই মহাদেশগুলো অন্য মহাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সেখান থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

Watch 1 Billion Years of Shifting Tectonic Plates in 40 Mesmerizing Seconds https://t.co/jcZM9PahT5

— ScienceAlert (@ScienceAlert) October 10, 2022

ভবিষ্যতে পৃথিবীতে কোন স্থান বাসযোগ্য থাকবে, যে মহাদেশটি এখন বিষুবরেখায় রয়েছে, সেটি কি আগামীতে উত্তর না দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাবে- এগুলো জানতে হলে এই মডেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিডনি ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানী সাবিন জাহিরোভিচ বলেন, পৃথিবী অবিশ্বাস্যভাবে গতিশীল। এর টেকটোনিক প্লেটগুলো নখ বৃদ্ধির গতিতে নড়াচড়া করে। কিন্তু যখন ১০০ কোটি বছরের দৃশ্য মাত্র ৪০ সেকেন্ডে একত্রিত হয়, তখন একটি মন্ত্রমুগ্ধকর নৃত্য দেখতে পাওয়া যায়। মহাসাগরগুলো উন্মুক্ত হয়, বন্ধ হয়, মহাদেশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং পর্যায়ক্রমে আবার মিলিত হয়ে বিশাল সুপারমহাদেশ গঠন করে।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট ডটকমকেএএ/