পূর্ব আকাশে তখনও সূর্য উঠেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ওয়াকওয়ের পাশে বসেছে রং বেরংয়ের ফুলের মেলা। নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা কেউ রজনীগন্ধা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা বা যুথি ফুলের স্টিক ও মাথায় পড়ার মালা তৈরি করছিলেন। তাদেরই একজন মধ্যবয়সী আজগর মিয়া।কাক ডাকা ভোর থেকেই স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ফুলের মালা গাঁথছিলেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের দ্রুত মালা গাঁথার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। বলছিলেন- “তাড়াতাড়ি করো একটু পরে পোলা মাইয়াগো ঢল নামবো। ভালো বেচাকেনা অইলে তোমারে কাইল ডাক্তার দেহামো।”জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আজগর মিয়া জানান, ঢাকা শহরে তারা উদ্বাস্তু। থাকার ঘরবাড়ি নাই। তাই উদ্যানের ভেতর পলিথিনের ছাপড়া ঘরে বানিয়ে একা থাকেন। বউডার (বউ) কয়েকদিন ধইরা মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগতাছে। টাকার অভাবে ডাক্তার দেহাইতে পারি নাই। আইজ ফাল্গুন মাসের পইলা তারিখ, ভালো মতো বেচাকেনা অইলে ভালো লাভ অইবো, অসুস্থ বউডার চিকিৎসা করামু।তিনি আরো জানান, ফজরের আজানের পর পরই শাহবাগ ফুলের মার্কেটে ছুটে যান। অনেকক্ষণ দরদাম করে শেষ পর্যন্ত ২২০ টাকা কেজি দরে ডাটা থেকে ঝরে পড়া রজনীগন্ধা ফুল কিনে আনেন।শুধু আজগর আলীই নয়, ফাল্গুনকে স্বাগত জানাতে যখন তরুণ তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন আজগরের মতো হতদরিদ্ররা ক্ষুধার আগুন মেটাতে ফুল বিক্রির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তেমনি আপন নামের এক যুবক জানান, ফাল্গুনের প্রথম দিনটা তাদের কাছে অনেকটা ঈদের খুশির মতো। এ দিনগুলোতে ফুলের বেচাকেনা খুব ভালো হয়। তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে ফুল গিফট করে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে দাম বেশি চাইলেও সে দামেই ফুল কিনে নেয়। তরুণীদের কাছে এইদিন মাথার ব্যান্ড ফুলের মালার কদর বেশি। প্রকারভেদে ফুলের দাম সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে ২০০/৩০০ টাকাও হয়। মরিয়ম নামের এক মহিলা জানান, তিনি শাহবাগ ও রুপসী বাংলা সিগন্যালে নিয়মিত ফুল বিক্রি করেন। এমনিতে প্রতিদিন হাজার টাকার ফুল কিনেন এবং বিক্রি করেন। আজ (শনিবার) সে একা নয় পরিবারের একাধিক সদস্যকে ফুল বিক্রির কাজে লাগাবেন। খুব ভোরে শাহবাগ থেকে ৮ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের ফুল কিনে এনেছেন তিনি।মরিয়ম আরো জানান, অভাবের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আজ পহেলা ফাল্গুন ও আগামীকাল (রোববার) বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বেচাবিক্রি ভালো হয়। লাভের টাকায় ভালো মন্দ কিছু খাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।এমইউ/আরএস/এমএস