খুলনার ৯টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত ৫৯৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪২৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপির নির্বাচনী এলাকা রূপসা উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রই ঝুকিপূর্ণের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এসব কেন্দ্রের জন্য ১০ জন করে পুলিশও দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ।সূত্রানুযায়ী, রূপসা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৪৮টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোটারদের সংখ্যাধিক্য, ভোট কেন্দ্রগুলোর পূর্ব ইতিহাস, নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের প্রভাবের মাত্রার পরিমাণ, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অতীত রেকর্ডসহ বিভিন্ন বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ বা অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধিসহ শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। অপরদিকে ঝুঁকিমুক্ত বা সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে তুলনামুলক স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। সূত্র জানায়, এক সময় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো। শ্রেণি তিনটি হলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিমুক্ত। এরপর অধিক গুরত্বপূর্ণ, গুরত্বপূর্ণ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভোটকেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমানে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়ন করা হবে। অবশ্য এবার ভোট গ্রহণের আগের দিন থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন পর্যন্তও ভোট কেন্দ্র ও আশেপাশে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার পর যে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বা নাশকতা এড়াতে ভোটের পরের দিনও নির্বাচনী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।সূত্র মতে, খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার মোট ৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ২২ মার্চ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৬৪টি ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৪ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ১২২ জন নারী ভোটার এবং ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮৬২ জন পুরুষ ভোটার রয়েছেন।খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৪৮টি ভোটকেন্দ্রের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র। এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ৭টি ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র। তেরখাদা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ২১টি ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র। দিঘলিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৪৩টি ভোটকেন্দ্রের ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ১৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত। এছাড়া ফুলতলা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২৮টি কেন্দ্রের ১৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ১৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত। সবগুলো উপজেলা থেকে সর্বোচ্চ ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১১৯টি কেন্দ্রের ৮৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ৩৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত। দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ১৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র। পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের ৯২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৬১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩১টি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র। কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবশিষ্ট ২৪টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। দুইটি শ্রেণিতে ভাগ করে অধিক গুরত্বপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল কিছু করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, কাজের সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে দুইটি শ্রেণি করে পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তবে অধিক গুরত্বপূর্ণ বা সাধারণ যেটিই হোক না কেন সকল কেন্দ্রেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে।আলমগীর হান্নান/এসএস/পিআর