দেশজুড়ে

দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যের বাড়িতে চলছে মাতম

দিনাজপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের পিকআপ ভ্যান উল্টে নিহত পুলিশ কনস্টেবল গাইবান্ধার আবদুল লতিফের (৩৫) গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কাজলঢোপের দক্ষিণ মধ্যম কুমেদপুর গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আবদুল লতিফের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই মা লাইলী বেগম (৫০), বাবা আবু মন্ডল (৬০), দুই ভাই, তিন বোন ও স্ত্রী তাদের দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে কেবলই কাঁদছেন।সোমবার সকাল থেকেই গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ তার বাড়িতে এসে ভিড় জমায়। আবদুল লতিফের স্বজনদের কান্না আর আর্তনাদ দেখে উপস্থিত নারী-পুরুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তারাও আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেন। আবদুল লতিফের অকাল মৃত্যুতে গোটা কাজলঢোপের মধ্যম কুমেদপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে নিহত আবদুল লতিফের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা-মা ভাই ও বোন এবং স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনরা লাশের অপেক্ষায় আহাজারি করছেন। আবদুল লতিফের মা লাইলী বেগম ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বাবা আবু মন্ডল ছেলেকে হারিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। ভাইকে হারানোর শোকে নিথর হয়ে আছেন ভাই ও বোনরা। স্বামীকে হারিয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী মোর্শেদা বেগম দুই ছেলে সন্তানকে বুকে আকড়ে ধরে শুধু বিলাপ করছেন। প্রতিবেশীরা জানান, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবদুল লতিফ সবার বড়। গত ১৬ বছর ধরে তিনি পুলিশে চাকরি করেন। চার বছর ধরে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানায় কর্মরত। ১৫ বছর আগে আবদুল লতিফ একই গ্রামের মোর্শেদা বেগমকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের সংসারে আতাউর রহমান মিম (১২) ও মুশফিক (আড়াই বছরের) নামে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। মিম স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এমারুল ইসলাম সাবিন জানান, আবদুল লতিফের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে বাদ মাগরিব বা এশার পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হতে পারে। এ বিষয়ে বোচাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল হক প্রধান জানান, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আবদুল লতিফের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর প্রথম জানাজা বোচাগঞ্জ থানা চত্বর ও দ্বিতীয় জানাজা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে পুলিশ পাহারায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় পাঠানো হয়েছে।  উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার মুর্শিদহাট ইউনিয়নের চিলাপাড়ায় রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পিকআপ ভ্যানে টহল দিচ্ছিলেন আবদুল লতিফসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা। এ সময় ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে পিকআপ ভ্যানের চালকসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। সংবাদ পেয়ে থানার অতিরিক্ত পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে আবদুল লতিফ মারা যান। অমিত দাশ/এসএস/পিআর