আবু জাহেল সম্পর্কে ছোট্ট একটি কথা ‘নুয়ে গেছে মাথা-রয়ে গেছে অহংকার।’ আবু জাহেলের গর্দানে সাহাবি হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর পা। আফরার দুই কিশোর ছেলে মুআজ ও মুআওবিজের তলোয়ারের ভাষায় একেবারে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে তাকে। ঐতিহাসিক বদরের কোনো এক প্রান্তে উর্ধ্বশ্বাসে কাতরাচ্ছে আবু জাহেল। খানিকক্ষণ পরেই শ্বাসনালী দিয়ে বেরিয়ে যাবে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস। আর কুল কায়েনাতের সব সৃষ্টিজীব আনন্দে উদ্বেলিত হবে আরেকবার। হাদিসের পরিভাষাও এমন- ‘আর গুনাহগার বান্দার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তিপ্রাপ্ত হয়।’ (বুখারি ৬৫২১)
আবু জাহেল বছরের পর বছর জমিনের ওপর রাজত্ব করেছে। আজ সেই কিনা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বদরের একপ্রান্তে জমিনের ওপর। যে কিনা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করতে চক্রান্ত করেছে বারবার অথচ সেই কিনা আজ ছোট্ট দুই কিশোরের হাতে হত্যার শিকার। মৃত্যুশয্যায়ও তার থেকে কমেনি অহংকার দাম্ভিকতা।
যখন সে মুমূর্ষু অবস্থায় জীবনের অন্তলগ্নে এসে পৌঁছেছে তখনও সে দাম্ভিকতার সুরে বলেছে-
وهل فوق رجل قتلتموه؟
‘তোমরা কি আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাউকে হত্যা করতে পেরেছো?’(মুসলিম ৪৫৫৪)
মৃত্যুর সময়ও তার অহংকার কমেনি। তার অহংকারের ভিত্তি কত মজুবত! বস্তুত আবু জাহেলের অহংকারের পরিমাণ পরিমাপ করা অসম্ভব। সে নিজের ভুল স্বীকার করেনি। স্বীকৃতি দেয়নি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে। বরং তার আচরণে স্বীকৃতি পেয়েছে অহংকার আর অহংকার। তাইতো সে মুমূর্ষু অবস্থায় আরও বলেছে-
فلو غير أكار قتلني؟
‘আমাকে যদি চাষীরা (যে দুই বালক তাকে হত্যা করেছে তাঁরা মদিনার আর তাঁরা কৃষিকাজ করতো) হত্যা না করে বড় কোনো বীর-বাহাদুর হত্যা করতো তবে কতইনা ভালো হতো’! (বুখারি ৪০২০)
তার এ কথাতেও অহংকার প্রকাশ পেয়েছে। সে ইসলাম গ্রহণ করতে চায়নি বরং সে চেয়েছে তাকে যদি কোন বীর বাহাদুর হত্যা করত তবে কতইনা ভালো হতো! কতটা অহংকার আর জেদ থাকলে মানুষ মৃত্যুর সময়ও এমন কথা বলতে পারে?
এই তো সেই আবু জাহেল যে কিনা অহংকার আর ক্ষমতার দাপটে সত্যকে ডিনাই করেছে অবিরাম। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জন্মভূমি মক্কা থেকে বিতাড়িত করেছে সে। আর তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সময় শত কষ্ট বুকে নিয়ে আক্ষেপ করে বলেছেন, ওহে মক্কাহ! তোর থেকে যদি আমাকে বের করা না হতো তবে কখনোই আমি বের হতাম না।’ (তিরমিজি ৩৯২৫)
এ কথা বলার সময় কি তাঁর চোখের পাঁপড়ি ভিজেনি? যিনি জন্মের আগে হারিয়েছেন বাবা, জন্মের ছয় বছর পর মা আর আট বছরে দাদা। তায়েফে পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন বিনা দোষে। একই বছরে হারিয়েছেন শ্রেষ্ঠ জীবনসঙ্গিনী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা ও চাচা আবু তালেবকে। আর এখন কিনা নিজের জন্মভূমিটাও ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। কিছুই তো আর রইলো না। এ সবই করেছে অহংকারী আবু জাহেল।
নাহ, আবু জাহেল মক্কা থেকে বের করেই ক্ষান্ত হয়নি। সে ষড়যন্ত্রের জাল বুনন করেছে মদিনা অব্দি। সময়ে সময়ে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। তাদের এহেনও ষড়যন্ত্রের বৃত্তে পড়ে শান্তিমত ঘুমোতে পারেননি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানোর জন্য সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রেখেছেন পাহারাদার।’ (মুসলিম ৬১২৫)
আবু জাহেল ইসলামকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে কত শত কূটকৌশল রচনা করেছে অথচ আজ সে কিনা মাটির সাথে মিশে আছে। মাটির সাথে মিশেনি ইসলাম কিন্ত মিশে গিয়েছে আবু জাহেল। মাটির সাথে লেপ্টে আছে তার বডি। আজ মৃত্যুর দূত তার সামনে হাজির। নিয়ে যাওয়া হবে তাকে আর পবিত্র করা হবে এ জমিন।
মনে রাখতে হবে
অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে। এ অহংকারই আবু জাহেলকে ধ্বংস করেছে। যেন অহংকার আর জাহালাত একেবারে গিলে ফেলেছে জাহেলটাকে। তাইতো তার তরে আবু জাহেল নামটাও যথার্থ স্বার্থক হয়েছে। পক্ষান্তরে ফেরাউন যখন নীল নদের জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলো; তখন কালিমা পড়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিলো। অহংকারের কারণে সে তুলনায় আবু জাহেল তলোয়ার আঘাত খেয়েও কালিমা পড়ার চেষ্টাটুকুও করেনি। এটি ছিল তার জেদ ও অহংকার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ ধরনের জেদ ও অহংকার থেকে মুক্ত রাখুন। এ সমাজে যারা আবু জাহেলের মতো জেদ ও অহংকার পোষণকারী রয়েছে তাদের হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম