জাতির গৌরব আর অহংকারের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সাভারে অবস্থিত স্মৃতির এই মিনারে নিজেদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে শহীদদের সম্মান জানায় গোটা জাতি। কিন্তু বিশেষ দিবস ছাড়া বছরের বেশির ভাগ সময়েই এই পবিত্র স্থাপনাকে অসম্মানিত করে আসছে দর্শনার্থীরা। ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে চরম গাফিলতি। বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মলিন হয়ে যাচ্ছে এই স্থাপনার গাম্ভীর্য। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনের অংশে চাকচিক্য থাকলেও চারপাশে নানান রকম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র ফুটে ওঠে। অজ্ঞাত শহীদদের কবরের উপড় হাঁটাচলা, উন্মুক্ত মঞ্চকে আনসার ক্যাম্প, সীমানা প্রাচীরে ভাঙ্গণ, লেকের পানি দূষণ, স্মৃতিসৌধের পাশ থেকে গাছ কাটা, হকারদের দৌরাত্ম, মদ-গাঁজা সেবনসহ নানা রকম অপরাধের অভায়াশ্রম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই স্মৃতিসৌধ।মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের উন্মুক্তমঞ্চ আনসার ক্যাম্প ও তাদের শয়নকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মঞ্চের ড্রেসিংরুম-এর একটি কক্ষ কর্তব্যরত আনসারদের ক্যাম্প ও শয়নকক্ষ ও অপর কক্ষটি স্মৃতিসৌধ মসজিদের খাদেমদের শয়নকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্তব্যরত ১০ জন আনসার ড্রেসিংরুমে থাকার ফলে শৌচাগারসহ অতিথি কক্ষের কাঠামোও নষ্ট হচ্ছে।এছাড়া মঞ্চের ড্রেসিংরুমের পিছনের পাশে চুলা বানিয়ে রান্না করার কারণে উন্মুক্ত মঞ্চের সার্বিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।কর্তব্যরত আনসারদের অফিসার ইনচার্জ সেলিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্মৃতিসৌধ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ওই জায়গায় ক্যাম্প করার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে ওই জায়গা পুলিশের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হত। এছাড়া মুক্তমঞ্চের চারপাশের বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে গেছে। সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশও ভেঙে গেছে। ফলে প্রাচীরের ওইসব ভাঙা অংশ দিয়ে মাদকসেবীরা এসে নানা ধরনের অপকর্ম করছে। স্মৃতিসৌধের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, স্মৃতিসৌধের পাশে থাকা লেকটিতে স্থানীয়রা আবর্জনা ফেলায় দূষিত হচ্ছে এই লেকের পানি। স্মৃতিসৌধের ভেতরে হকারদের কোনো প্রকার ব্যবসা করার অনুমতি না থাকলেও কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। যার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে হর হামেশা। দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের পেছনের বিভিন্ন জায়গা থেকে গাছ কেটে বিক্রি করছে স্মৃতিসৌধের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্মৃতিসৌধের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে সীমানা প্রাচীর ছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজন এই প্রাচীর ভেঙে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছে। স্মৃতিসৌধের মূল মিনারটির পাশেই অজ্ঞাত শহীদদের কবর। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই সমাধির উপর হাঁটাচলা করতেও দ্বিধা করেন না দর্শনার্থীরা। তবে দর্শনার্থীদের এমন আচরণ রোধ করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে স্মৃতিসৌধের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, স্মৃতিসৌধের পবিত্রতা রক্ষায় চেষ্টার ত্রুটি নেই আমাদের। কিন্তু বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর কারণে অনেক সময় কিছু ত্রুটির সৃষ্টি হয়। এখানে আগত দর্শনার্থীদের খেয়াল রাখা উচিত যেন তাদের দ্বারা শহীদদের অবমাননা না হয়। এসকেডি/একে/এআরএস/এবিএস