দেশজুড়ে

শিবসা নদীতে কুমির আতঙ্ক, মাছ ধরছেন না জেলেরা

খুলনার পাইকগাছা উপজেলা ও সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে শিবসা নদী। তাই এ নদীতে কুমিরের বাস থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে বনের ভেতর থেকে নদী হয়ে লোকালয়েও চলে আসছে কুমির। ফলে কুমিরের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছেন জেলেরা। কুমিরের ভয়ে নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। অনেকেই খেয়েছেন কুমিরের তাড়া।

স্থানীয় জেলেরা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বড় বড় কুমির বিচরণ করছে। কুমিরের আক্রমণে আহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। ভয়ে এলাকার লোকজন নদীতে নামছে না। মাছও ধরতে পারছেন না। এতে জেলে পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে দুর্দিন।

স্থানীয় এলাকাবাসী আব্দুল আজিজ, হরগোপাল মন্ডল, বিষ্ণুপদ মন্ডল জানান, বছরের এ সময়টায় উপজেলার শিবসা, হাপর খালী, ভদ্রাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে কুমিরের আনাগোনা বেড়ে যায়। সম্প্রতি উপজেলার সীমান্তবর্তী দাকোপ উপজেলার ঝালবুনিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কুমিরের লেজের বাড়ি খেয়ে আহত হন। এছাড়া উপজেলার দেলুটি ও দারুনমল্লিকের মধ্যবর্তী হাপরখালী নদীতে কুমিরের বিচরণ দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করেছেন।

তারা আরও জানান, শুক্রবার সকালে উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের শিবসা নদীর তীরবর্তী বয়ারঝাপা গ্রামের মাজেদ আলী খাঁ নদীতে মাছ ধরতে যান। হঠাৎ একটি কুমির তার সামনে ভেসে ওঠে। মাজেদ ভয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে যান।

সোলাদানার রবিউল সানা বলেন, নদীতে মাছ ধরে কোনোমতে সংসার চালাই। কিন্তু প্রায়ই শিবসা নদীতে কুমির ভাসছে। আবার ডাঙায়ও উঠে আসছে। ভয়ে নদীতে নামতে পারছি না।কুমিরের কথা শুনে আমার বাড়ি থেকেও মাছ ধরতে যেতে দিচ্ছে না।

সম্প্রতি পাইকগাছা উপজেলার পার্শ্ববর্তী দাকোপ উপজেলার কালাবগী গ্রামের খায়রুল ইসলাম মোড়ল নদীতে মাছ ধরার সময় কুমির তাকে টেনে নিয়ে যায়। দুদিন পর তার মরদেহ ভেসে ওঠে। খায়রুলের মৃত্যুর পর কুমির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভয়ে কেউ নদীতে নামছে না।

নদীতে কুমির দেখার বিষয়টি স্বীকার করে মৎস্য কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, আমি জেলেদের সতর্ক করেছি। এছাড়া উপজেলার ১০টি জেলে পল্লীতে খবর দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

দেলুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, জেলেদের সতর্কতার সঙ্গে নদীতে নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর কিছু করার নেই। কারণ কুমির একটি বিপন্ন প্রাণী। একে তো টিকিয়ে রাখতে হবে। তাই জেলেদের সতর্কতার সঙ্গে মাছ ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কুমিরের বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মো. মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, কুমির তো সীমানা চেনে না, খাদ্য ঘাটতি পড়লেই তারা উপরের নদ-নদীতে চলে আসে।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে ডুমুরিয়াতেও কুমির দেখা গেছে। আমরা জানতে পেরেছি সেখানে কুমিরকে খাদ্য দেওয়া হতো। মরা গরু ছাগল ফেলা হতো নদীতে। ফলে কুমির সেখানে ঘাঁটি গাড়ে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীকে সতর্ক করেছি। কুমিরকে খাদ্য দিতে নিষেধ করেছি। খাদ্য দেওয়া বন্ধ করায় কুমির আবার সুন্দরবনে ফিরে গেছে। কোথাও কুমির দেখা গেলে আমাদের জানাতে বলেছি। আমরা টিম পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।

আলমগীর হান্নান/এসজে/জিকেএস