৯০ বছরের বৃদ্ধ মকছেদ আলী। শৈশব থেকেই ছিলেন অনেক চঞ্চল। যেখানেই নৌকাবাইচের কথা শুনতেন ছুটে যেতেন। সঙ্গে নিতেন শ্যালক মজিবুর রহমানকে (৮৮)। এখন অনেক বয়স হয়েছে। দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ। তবুও ভুলে যাননি সেসব দিনের স্মৃতি। তিনদিন ধরে শ্যালক মজিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাই নদীতে নৌকাবাইচ দেখছেন মকছেদ আলী।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চরবালিয়া ঝিনাই নদীতে দেখা মেলে এ বৃদ্ধ যুগলের। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা।
নৌকাবাইচ দেখার সময় তাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ছবি তোলার অনুমতি চাইলে হাসতে হাসতে জানতে চান, ‘ছবি দিয়া কী অবো (হবে)?’ পরে প্রতিবেদন করার কথা শুনে ছবি তোলার অনুমতি দেন তারা।
ছবি তোলার ফাঁকে কথা চলে এ বৃদ্ধ যুগলের সঙ্গে। তারা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাপ-দাদার আমলে আংগেরো (আমাদের) বড় বড় বাইচাল (বাইচের) নৌকা ছিল। তহন (তখন) আমরাও খেলবার (খেলতে) যাইতাম, পাইজ (পুরস্কার) নিয়া আইতাম (আসতাম)। এহনও (এখনও) ভুলবার পাই না তহনকার (তখনকার) কতা (কথা)। মনে হইলেই কান্দন (কান্না) আহে (আসে)। তহনও (তখনও) শালারে (শ্যালক) হাতে (সঙ্গে) নিয়া আইতাম। আইজও (আজকেও) আইছি (আসছি)।’
একপর্যায়ে মকসেদ আলী বলেন, ‘এহনকার (এখনকার) পোলাপাইন (ছেলেমেয়ে) মোবাইলে হারাদিন (সারাদিন) জানি কী দেহে (দেখে) আর খালি হাসে। আংগোর সময় মোবাইল-টোবাইল কিছুই ছিল না। তহনি (তখন) বালা (ভালো) ছিলাম।’
উপজেলার চরবালিয়া যুবসমাজ ও বলারদিয়ার যুবসমাজের উদ্যোগে ঝিনাই নদীতে তিন দিনব্যাপী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার প্রথমদিন ১১টি নৌকা অংশ নেয়। এর মধ্য থেকে বাছাই করে তিনটি নৌকাকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত করা হয়।
আজ শেষদিনে চ্যাম্পিয়নদের জন্য মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীদের জন্য একটি ষাঁড় গরু ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের দেওয়া হয় একটি এলএডি টিভি। নৌকাবাইচ দেখতে হাজারও মানুষের সমাগম হয়।
নাসিম উদ্দিন/এসআর/জিকেএস