গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডের সুপারভাইজার জালালের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তার স্ত্রীকে চাকরি এবং সন্তানের ভরণপোষণ দেবে কারখানাটি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টিফ্যাবস কারখানায় আসেন নিহত শ্রমিকের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও একমাত্র কন্যা সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম (৯)। পরে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. মেজবা ফারুকী তাদের হাতে চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন।
এছাড়া তিনি শিশু সন্তানের পড়াশোনা ও বিয়ে পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব নেন। ওই সময় নিহতের স্ত্রী কাজ করে খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়ার কথা জানান।
নিহত জালাল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জালাল জরুন এলাকার ফজল মোল্লার ভাড়া বাসায় সপরিবার বসবাস করতেন। ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় বাড়ি যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ নভেম্বর দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ জামাল মারা গেছেন
নিহত জালালের সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম মহানগরীর জরুন এলাকার গাজীপুর সিটি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়েটি। সে বলে, ‘বাবা কাজে যাওয়ার সময় বলতো- বাবা তোমাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে। তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।
নিহতের স্ত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি এখন অসহায়। আমি বিএ পাশ করে গৃহিণী ছিলাম। এখন মাল্টিফ্যাবস কারখানা আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছে, এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে। এ ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারবো না। মেয়েকে নিয়ে আমি এখন জীবন সংগ্রামে নেমেছি।
মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানার ডা. মেজবা ফারুকী বলেন, একটি পত্রিকায় জালালের মেয়ের ছবি দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেই মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রাথমিকভাবে তাদের খরচের জন্য দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। এছাড়া জান্নাতুল যতদিন লেখাপড়া করবে যতদূর করবে বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব খরচ আমরা বহন করবো।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ওই কারখানার এজিএম এইচআর এডমিন আবু সেহাব, ম্যানেজার রিপুল মিয়া, সহকারী ব্যবস্থাপক খ. আহমাদুল কবির মান্না, এক্সিকিউটিভ মো. ওমর হামদু, শ্রমিক প্রতিনিধি সায়লা আক্তার ও আরিফা আক্তার, নাজমুল হুদা, মনির হোসেন, সোহাগ হোসেন।
আমিনুল ইসলাম/এসজে/জেআইএম