ঝিনাইদহের চারটি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ তালিকা প্রকাশ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চারটি আসনে প্রতিটিতে নিবন্ধিত দল বাদেও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। যাদের হলফনামায় নগদ টাকা, স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে ছয়জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র রয়েছেন দুজন। এদের মধ্যে একজন হলেন দেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ী ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইমলাম বিশ্বাস দুলাল এবং মুনিয়া আফরিন। সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম দুলাল হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস। তার কৃষি থেকে বার্ষিক আয় ১২ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৩ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া ২৬ লাখ ২৩ হাজার ১৭৫ টাকা, চাকরি থেকে ৭১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় এক কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ১০৩ টাকা। এছাড়া নগদ এক কোটি ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯২২ টাকা; বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ার ৩২ কোটি ৩৮ লাখ ৯১ হাজার ২১৯ টাক এবং ৫০ ভরি সোনা রয়েছে তার।
এসবের পাশাপাশি ২১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। হলফনামায় জমির পরিমাণ উল্লেখ না করলেও তার মূল্য ২১ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ টাকা উল্লেখ রয়েছে।
ঝিনাইদহে একটি তিনতলার বাড়ি এবং ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্ট উল্লেখ করে তার মূল্য দেখানো হয়েছে সাত কোটি ৪৫ লাখ ৯৩০ টাকা। এছাড়া তিনি দায়দেনা দেখিয়েছেন ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে তার স্ত্রী (অপর স্বতন্ত্রী প্রার্থী) মুনিয়া আফরিন হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করে আয়ের বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৫০ লাখ ২৭ হাজার ২৩৬ টাকা, নগদ সাত লাখ ৩ হাজার ৩২৫ টাকা এবং ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দুই লাখ ১২ হাজার ১৩০ টাকা।
হলফনামায় গাড়ির সংখ্যা উল্লেখ না করলেও মূল্য দেখানো হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। সোনা রয়েছে ৩০ ভরি। অন্যান্য ব্যবসায়িক মূলধন দেখিয়েছেন এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। নরসিংদীতে একটি ব্যবসায়িক দালানের মূল্য উলেখ করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ টাকা।
ঝিনাইদহ-২ (ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসন থেকে ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী দুজন। এদেরমধ্যে একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, অন্যজন রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যানসহ দেশের প্রথম সারির ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।
সাইদুল করিম মিন্টুর হলফনামায় দেখা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি এবং তার নামে দুদকের একটি মামলা চলমান। তার কৃষিখাত থেকে বার্ষিক আয় দেড় লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে এক কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং শেয়ার ও অন্যান্য উৎস থেকে ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এছাড়া নগদ এক লাখ, ব্যাংক আমানত ২০ লাখ ৫৮ হাজার, গাড়ি ২১ লাখ ৪০ হাজার, সোনা ৬০ ভরি এবং ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্রের মূল্য দেখিয়েছেন চার লাখ টাকা।
বাণিজ্যিক ও আবাসিক দালান রয়েছে চারটি। এছাড়া দুই কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার ৩২৪ টাকার দায়দেনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন জেলার প্রভাবশালী এ রাজনৈতিক নেতা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ারের হলফনামায় দেখা যায়, তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ প্রায় ১৯ কোটি টাকা। স্ত্রীর আয় প্রায় ৬৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নগদ অর্থের পরিমাণ এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা, উভয়ের সোনার পরিমাণ ৯৫ ভরি। এছাড়া আসবাবপত্র ১৫ লাখ ৬০ হাজার এবং ব্যবসায়িক মূলধন প্রায় ৩২ কোটি টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি। তার প্রায় ৬৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ঝিনাইদহ-৩ (কোচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা) আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল। তিনি দুই মেয়াদে পৌর মেয়র এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। হলফনামায় দেখা যায়, তার বার্ষিক আয় ৫১ লাখ টাকা। নগদ অর্থের পরিমাণ ২৭ লাখ ৬৬ হাজার এবং স্ত্রীর রয়েছে ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নিজের ৮ ভরি এবং স্ত্রীর ২৫ ভরি সোনা রয়েছে। এসবের পাশাপাশি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার গাড়ি, কৃষিজমি ১.১০ একর এবং সাত কাঠা অকৃষি জমির মালিক দুইবারের এ এমপি। এছাড়া এক লাখ টাকা মূল্যের দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ির তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নবী নেওয়াজ। তার হলফনামায় দেখা যায়, কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ৪২.১৫ শতক, নগদ রয়েছে ৩০ লাখ, ব্যাংকে জমা ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া ১৭ লাখ টাকার গাড়ি, ৩৯ ভরি সোনা এবং ৩০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্রের তথ্য উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
এদিকে বিএ পাস অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিচুর রহমান তার হলফনামায় ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন এক লাখ ৮৪ হাজার। এছাড়া ৫০ ভরি সোনা, তিন লাখ টাকার আসবাবপত্রের তথ্য উল্লেখ করেছেন।
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসন থেকে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র রয়েছে দুজন। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম ছানা এক মেয়াদে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, এইচএসসি পাস নজরুল ইসলামের কৃষিখাত থেকে বার্ষিক এক লাখ ৯ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে দুই লাখ ২৭ হাজার টাকা আয় করেন। ব্যাংকে স্বামী-স্ত্রীর জমা ২৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা, উভয়ের সোনা রয়েছে ৪৫ ভরি এবং জমির পরিমাণ ১১ বিঘা। হলফনামায় আর কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি।
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুরর রশিদ খোকনের কাছে নগদ রয়েছে ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। তার বার্ষিক আয় প্রায় ১২ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা ৮৫ লাখ ২৬ হাজার ১২১ টাকা, সোনা আছে পাঁচ ভরি। এছাড়া রয়েছে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের চারতলা একটি বাড়ি ও একটি ইটভাটা। তার দুই কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জেআইএম