চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবা পেতে অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি রোগীরা। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, দালাল ও কথিত কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের দৌরাত্ম্য এখন চরমে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন পৌর এলাকার বুদ্ধিমান পাড়ার সাইদুর রহমানের ছেলে সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তার ক্ষতস্থানে সেলাই বাবদ ১৯শো টাকা দাবি করেন জরুরি বিভাগের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকরা। টাকা জোগাড় করতে দেরি হওয়ায় ৪০ মিনিট তাকে কোনো সেবা না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরে শেষ পর্যন্ত বিভিন্নজনের থেকে ১৫শো টাকা ধার করে স্বেচ্ছাসেবকদের দিলে তারা সেলিমের ক্ষতস্থানে সেলাই করেন।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সেলিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘আমি সেলিম, গুরুতর আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গেলে সেখানে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবক উজ্জল হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান কাটাস্থানে সেলাই দিতে হবে। সেখানে সেলাই বাবদ ১৯শ’ টাকা প্রদান করতে হবে। এ সময় আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। আমার স্বজনদের বিষয়টি জানালে সবাই কিছু টাকা দিয়ে মোট ১৫শ’ টাকা জোগাড় করে দিলেও প্রথমে নেননি স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের দাবি ১৯শ’ টাকাই দিতে হবে। এ জন্য আমাকে প্রায় ৪০ মিনিট বসিয়ে রাখেন তারা। পরে ১৫শ’ টাকা নিয়ে ক্ষতস্থানে সেলাই করেন কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকরা।’
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত কমিটি গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের সেবা দেওয়া নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবাধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, অফিসিয়ালভাবে জরুরি বিভাগে কোনো স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়নি। তারা নিজেরা বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে এখানে এসে নিজেদের সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।
একদিকে দালালচক্রের অপতৎপরতা, অন্যদিকে জরুরি বিভাগের কতিপয় স্বেচ্ছাসেবকের লাগামহীন দুর্নীতি। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে নাকাল রোগী ও স্বজনরা। টাকা ছাড়া মিলছে না চিকিৎসা। টাকা দিতে না পারলে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এক প্রকার জোরপূর্বক টাকা আদায় করেই রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তারা। ৩০ এর বেশি কথিত স্বেচ্ছাসেবক নামধারী সিন্ডিকেট আছে হাসপাতাল চত্বরে।
এর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক চুরির ঘটনায় তৎকালীন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেছিলেন, স্বেচ্ছাসেবক নামধারী প্রায় ৩৫ জন অবৈধভাবে কাজের নামে হাসপাতালে থাকে। তারা বিভিন্ন সময় রোগীদের হয়রানিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত।
বিভিন্ন সময় সদর হাসপাতালে জনবল সঙ্কটের সুযোগে বিভিন্ন মাধ্যমের সহায়তায় জায়গা করে নিয়েছে এসব স্বেচ্ছাসেবকের দল। আর প্রকাশ্যেই চলছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগ না দিলেও তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে অনিয়মই একপ্রকার নিয়মে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
অন্যদিকে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির দালালচক্র মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে সদর হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্থানান্তর করছে। দৈনিক এ সিন্ডিকেট ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরিব অসহায় রোগীদের কাছ থেকে। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই তাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় বলে রোগীর স্বজনরা জানান।
ওয়ার্ডে চিকিৎসকের সঙ্গে দালালদেরও রাউন্ড দিতে দেখা যায়। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে কোনো পরীক্ষা-নীরিক্ষা দিলেই তাৎক্ষণিক দালালেরা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাদের ভাগিয়ে নেয়।
হুসাইন মালিক/এফএ/জেআইএম