এক রাতেই জাবির ছাত্রী হলের ১৭ কক্ষে চুরি
করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রীতিলতা হলের ১৭টি রুমে তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে ছাত্রীরা হলের বাইরে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুক্রবার (১২ জুন) সকালে বিষয়টি হল প্রশাসনের নজরে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে হল কর্তৃপক্ষ। তবে শনিবার (১৩ জুন) সংশ্লিষ্ট রুমের ছাত্রীদের বিষয়টি জানানো হয়।
প্রীতিলতা হল প্রশাসন ও হলের আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণেও চুরির বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে শুক্রবার সকালে হলের ‘এ’ ব্লকের ২০১, ২০৩, ২১১, ২১৬, ২১৭, ৩০১ ও ৩০৫ এবং ‘বি’ ব্লকের ১১৩, ২০২, ২১২, ২১৩, ২২২, ৩০৯, ৪০৩, ৪১২ ও ৪২১ নম্বর কক্ষসহ একটি স্টোররুমের দরজার তালা ভেঙে চুরির বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকতেও কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে সেই ব্যাপারে হল প্রশাসন এবং আবাসিক ছাত্রীদের কেউই কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
প্রীতিলতা হলের আবাসিক ছাত্রী আইন ও বিচার বিভাগের আশরেফুল নাহার জাগো নিউজ বলেন, ছোটখাটো চুরি আগেও হয়েছে। রমজানের ছুটিতেও চুরি হয়েছে গণরুমে। লম্বাছুটিতে গণরুম খোলা পড়ে থাকে। তালা দেয়ার কথা এবার বলে আসা হয়েছিল, দিয়েছে কিনা জানি না। হলে যে কেউ চাইলে ঢুকতে পারে। যেমন প্রায়ই বারান্দা থেকে জামাকাপড় চুরি হয়।
হলের আরেক আবাসিক ছাত্রী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মনিকা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, আজ হলের প্রভোস্ট জানিয়েছে আমাদের রুমের তালা ভাঙা। হলে আমার পাঁচ হাজারের মতো টাকা, গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র ছিল। এছাড়া জামা-কাপড়, সাইকেল ছিল। এসব নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। এত নিরাপত্তা থাকা স্বত্ত্বেও কিভাবে এমন ঘটনা ঘটে!
এ বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার সকালে হলের দুটি ব্লকের ১৭টি রুমের দরজা খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট রুমের ছাত্রীদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়া বাকিদেরও জানানো হচ্ছে। হলের সিসি ক্যামেরা নষ্ট হওয়ায় কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে প্রীতিলতা হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ জানিয়েছেন হলটির আবাসিক ছাত্রীরা। এসব অভিযোগের বিষয়ে হল প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
হলের আবাসিক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিদিতা তাহসিন জাগো নিউজকে বলেন, হলে চুরির ঘটনা নতুন নয়। এরপরেও হল প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এমন ধরনের ঘটনা ঘটছেই। হলে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তাপ্রহরী থাকতে কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এসব বিষয়ে বারবার হল প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের আরেক আবাসিক ছাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, হল প্রশাসনের কাছে ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে একটু উদাসীনতা বরাবরই লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি যৌন হয়রানির দায়ে একজন গার্ডকে চাকরিচ্যুত করতে অভিযোগকারীকে কঠোর আন্দোলন করতে হয়েছে। খুব সহজেই নাম-পরিচয় ব্যতিত যে কেউ হলে ঢুকে যেতে পারে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এ হলে থেকেছেন বছরের পর বছর এমন রেকর্ডও আছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা জাগো নিউজকে বলেন, হলের সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা নষ্ট হয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরা কার্যকর করতে অনেক চেষ্টা করেছি। এবারের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। হল সুপারের কাছে জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
ফারুক/এমএএস/জেআইএম