২০২০ সালে ঢাকা কলেজ হারিয়েছে যাদের
প্রতিবছরের মতো ২০২০ সালেও পূর্ব আকাশে ভোরের সূর্য উদয় হয়েছিল৷ বছর চলে যায়, তবে আজীবন সাক্ষী হয়ে থাকে নানা ঘটনা আর কালক্রম৷ তেমনি ২০২০ সাল করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পৃথিবীজুড়ে এক আতঙ্কের নাম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ বছরজুড়ে পরিবারে অনেক অতিথি আসে আবার চলেও যায়৷ উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজধানীর ঢাকা কলেজ৷ ২০২০ সালের পুরো সময়টা জুড়ে ঢাকা কলেজ তার পরিবারের অনেক সদস্যকে হারিয়েছে।
সাদভী আহমেদ
ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন সাদভী আহমেদ৷ স্বপ্ন ছিল বিশ্বজয়ের। তবে অকালেই তাতে ছেদ পড়ে৷ গত ৪ আগস্ট ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন৷ তবে বাড়ি ফেরা হয়নি তার৷ দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।
নিহত সাদভী (২০) নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইটনা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
সোহেল রানা
ঢাকা কলেজের ২০১৭-১৮ সেশনের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন সোহেল রানা৷ গত ৯ আগস্ট আড়িয়াল খাঁ নদীতে ডুবে নিহত হন তিনি৷ ব্রক্ষ্মপুত্রের শাখা নদী আড়িয়াল খাঁয় এদিন বন্ধুদের সাথে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন সোহেল৷ পরে স্থানীয় লোকজন এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দীর্ঘসময় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। ১০ আগস্ট ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণপুর গ্রামে মাঝ নদীতে ভেসে উঠে সোহেলের মরদেহ। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মরদেহ উদ্ধার করে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অধ্যাপক নাজির উদ্দিন আহমেদ
গত ২০ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজির উদ্দিন আহমেদ৷ বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ ১৯৩৬ সালে নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন৷ মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, দুই কন্যা এবং অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন৷
রবিউল ইসলাম
ঢাকা কলেজের স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন রবিউল ইসলাম। গত ৩ অক্টোবর টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি৷ ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের বেড়িবাঁধ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে৷ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল কলেজের শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
মেজবাহ উদ্দিন
গত ১২ ডিসেম্বর ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেজবাহ উদ্দিন। রাজধানীর মগবাজারে রেল গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে৷ নিহত মেজবাহ স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফল করার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এমনকি বিভাগের পক্ষ থেকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেয়ার প্রস্তাবও পেয়েছিলেন মেধাবী মেজবাহ। তার অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন বন্ধু ও সহপাঠীরা।
অধ্যাপক আফরোজা সুলতানা
ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন আফরোজা সুলতানা। গত ১৪ ডিসেম্বর ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ এর পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ এদিন শীতের কুয়াশা ভেদ করে ভোরের আলো ফোটার পরপরই আকস্মিক এক দুঃসংবাদে শোকে কাতর হয়ে পড়ে ঢাকা কলেজ পরিবার। তিনি ১৩তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন৷
আবদুল কাদের
ত্বকের বিরল রোগ ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল কাদেরের৷ তিনি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২১ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আবদুল কাদেরের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থানার বনবিহার গ্রামে। তার বাবার নাম জয়নাল।
এছাড়া গত ১০ মে কলেজের অফিস সহকারী মানিক চন্দ্র ধর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও মো. আবদুল মান্নান (অফিস সহকারী, অধ্যক্ষের কার্যালয়) এবং মো. জাহাঙ্গীরও (কেয়ারটেকার) ২০২০ সালেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন৷
নাহিদ হাসান/এএএইচ/এমএস