ঢাবি ক্যাম্পাস ফের কবে মুখরিত হবে?
‘হল খুলে দাও।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের তালাবদ্ধ বিশাল লোহার গেটের প্রবেশদ্বারে বড় বড় হরফে লেখাটি মধ্যবয়সী এক দম্পতি দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন। পুরান ঢাকার বকশিবাজারের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান ও সাবিহা আক্তার নামে ওই দম্পতির খুব আগ্রহ নিয়ে লেখাটি পড়ার কারণ তাদের ছোট মেয়েও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
কাক ডাকা ভোরে উঠেই কোনোদিন নাস্তা খেয়ে আবার কোনোদিন না খেয়ে ক্যাম্পাসে ছুটতেন তাদের মেয়েটি। সারাদিন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, লাইব্রেরি ওয়ার্ক ও বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে শেষ বিকেলে বাসায় ফেরাই ছিল তার দৈনন্দিন রুটিন। কিন্তু করোনার কারণে গত নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে মেয়েটি বলতে গেলে গৃহবন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। তাই নববর্ষের প্রথম দিনে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকালে হল গেটের লেখাটি পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে তা নিয়ে অন্যান্য প্রাতঃভ্রমণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ওই দম্পতি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মাহবুবুর রহমান বলছিলেন, নববর্ষের প্রথম দিনে ক্যাম্পাসের এমন নিষ্প্রাণ চিত্র অতীতে কখনো তারা দেখেননি বা শোনেননি। অন্যান্য বছর ৩১ ডিসেম্বর (থার্টি ফার্স্ট) উদযাপন উপলক্ষে সন্ধ্যা থেকেই শত শত শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত হতো ক্যাম্পাস। রাত ১২টা বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়তেন তরুণ-তরুণীরা। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও গভীর রাত পর্যন্ত উল্লাস চলতো।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে গতরাতে শিক্ষার্থীদের তেমন জমায়েত দেখেননি। আজও ক্যাম্পাসে সুনশান নীরবতা। মহামারি করোনা সব কিছু বদলে দিয়েছে। আল্লাহ-ই ভালো জানেন, মহামারি কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় কবে আবার ঢাবি ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে উঠে।
মাহবুবুর রহমানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে একই প্রশ্ন, কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়? শিক্ষার্থীদের পদচারণায় কবে আবার মুখরিত হবে ঢাবি ক্যাম্পাস।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত ও ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পর ক্যাম্পাসে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় প্রথমে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও ক্যাম্পাসে যানবাহন প্রবেশের দুটি পথ (নীলক্ষেত ও উদয়ন স্কুলের সামনের গেট) বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনার সংক্রমণ বাড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঢাবি ক্যাম্পাস তার চিরায়ত রূপ হারিয়ে জনশূন্য-নিষ্প্রাণ এলাকায় পরিণত হওয়ার নয় মাস পেরিয়ে গেলেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
শুক্রবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নেই। ক্যাম্পাস এলাকায় যাদের বাসা তাদের মধ্যেও হাতেগোনা কিছু মানুষ প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন। টিএসসি থেকে সোজা যতদূর চোখ যায় শুধুই শূন্যতা। স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হলের (পুরুষ ও নারী উভয় শিক্ষার্থীদের) সামনে সার্বক্ষণিক ৩০/৪০ জনের উপস্থিতি থাকলেও হল বন্ধ থাকায় এখন কেউ নেই।
ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে দু’একজন দারোয়ানকে শীতের সকালে গরম চাদর গায়ে জড়িয়ে ঝিমুতে দেখা গেছে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনের ছাউনিতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের কাউকে বসে আবার কাউকে দাঁড়িয়ে আলাপরত দেখা যায়। রাস্তাঘাটেও ঝরাপাতা পড়ে আছে। রাস্তা সংস্কারের কারণে এদিক সেদিক ইটের খোয়া ও বালুর স্তুপ জমে আছে।
এমইউ/এমআরআর/জেআইএম