জবির নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্প: জমি অধিগ্রহণেই ৩ বছর পার
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। পরের বছর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নকশা দেখেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার (৯ অক্টোবর) এ প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত শুধু জমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে প্রকল্পের কাজ। প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, হ্রদ খনন, পুকুর খনন, ঘাট নির্মাণ, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সারফেস ড্রেন নির্মাণ ও মাস্টারপ্ল্যানের কাজ করার কথা রয়েছে। তবে তিন বছরে প্রকল্পটির প্রায় ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ শেষসহ আরও ১২ একর অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
তবে কাজের অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকে দুষছে প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের প্রাথমিক কাজ বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এসময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হওয়ার পর দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহ-সভাপতি সুমাইয়া সোমা বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বারবার পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ ছাড়া কিছুই হয়নি। কাজ কেন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা একমাত্র মাঠ বাঁচাতে আন্দোলন করছে। দ্রুত ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন হলে আমাদের সমস্যা দূর হতো বলে জানান তিনি।
নতুন ক্যাম্পাসের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, করোনার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। ক্যাম্পাসের ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণসহ বাকি ১২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। প্রাচীর নির্মাণসহ বাকি উন্নয়নমূলক কাজও প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি, নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস হবে জবির নতুন ক্যাম্পাস। দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করে আমাদের ছাত্রদের হল-মাঠসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা তার।
প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনাসহ কিছু কারণে কাজ একটু পিছিয়ে পড়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বর্তমান উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের অবকাঠামোতে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ও অবকাঠামো সংকট থাকায় শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজরে আসার পর জবিকে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন তিনি।
রায়হান শান্ত/এআরএ/এমএস