দেশে সরিষা গবেষণায় সাফল্য, বাড়বে ফলন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ২৭ জুন ২০২২

ছত্রাকজনিত রোগ অলটারনারিয়া ব্লাইট প্রতিরোধী এবং উচ্চফলনশীল সরিষার পাঁচটি জাত উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় এ সাফল্য পেয়েছেন তারা।

সোমবার (২৭ জুন) এ তথ্য জানান গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন।

গবেষণা প্রকল্পটির সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান।

Corn-(4)

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে বাকৃবি রিসার্স সিস্টেমের সহায়তায় এ গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বিগত তিন বছরের চলমান গবেষণা চলতি মাসে শেষ হবে।

উদ্ভাবিত সরিষার জাতগুলো হলো বাউ সরিষা-৪, বাউ সরিষা-৫, বাউ সরিষা-৬, বাউ সরিষা-৭ এবং বাউ সরিষা-৮। জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৫ টন, যা প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি।

জাতগুলো সারাদেশে চাষের উপযোগী এবং এদের জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৫ দিন। কৃষকরা এ জাতগুলো চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দেড় থেকে দ্বিগুণ অর্থিক লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন গবেষকরা।

Corn-(4)

গবেষক ড. আরিফ বলেন, ‘দেশে সরিষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো নানান রোগ ও পোকার আক্রমণ। যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগটি এককভাবে তেলবীজের ফলন ৩০-৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এমনকী কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমির শতভাগ ফসল নষ্ট করে দেয়। নতুন উদ্ভবিত জাতগুলো অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগের প্রতি উচ্চমাত্রায় সহনশীল।’

সরিষার উপকারিতা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, সরিষার তেলে মনোআনসেচুরেটেড এবং পলিআনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকায় রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে থাকে। ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, বিপাক ক্রিয়াকে তরান্বিত করে, ক্যানসারের প্রবণতা কমায়। সরিষার তেলে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোলেট নামক মেটাবোলাইট বিশ্লেষিত হয়ে আইসোথায়োসায়ানেট তৈরি হয়, যা ক্যানসার কোষ গঠনে বাধা দেয়।

তিনি আরও জানান, সরিষা তেল ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী। রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে গ্লকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখাতে সরিষার তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Corn-(4)

উদ্ভাবিত পাঁচটি জাত ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতগুলো অতিরিক্ত আর্দ্রতাতেও ১০০ দিনের মধ্যে দানা পরিপক্ব হতে সক্ষম।

দেশে বর্তমানে প্রায় ০.৩ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ঝাঁঝের কারণে রসনা বিলাসের পাশাপাশি ভোজ্যতেলের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করছে সরিষা।

সরিষার তেলবীজে জাতভেদে ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ তেল থাকে। এ উৎপাদন দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১৫-২০ শতাংশ পূরণ করছে। ভোজ্যতেল আমদানিতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। সরিষার জাতগুলো আবাদের মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান গবেষক ড. রবিন।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।