পারিবারিক কলহের জের
জবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা, সাক্ষীরাই বলছেন ‘মিথ্যা’!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান খানের নামে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ উঠেছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর লীলফামারীর ডিমলা থানায় মামলাটি করেছেন তারই আপন চাচি সাজেদা বেগম। তবে মামলায় বাদী যাদের সাক্ষী করেছেন, তাদের দুজন বলছেন, ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না এমন দুজনকেও আসামি করেছেন বাদী।
ডিমলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২ সেপ্টেম্বর মামলাটি হাতে পেয়েছি। আসামি ধরার চেষ্টা করছি।’
জানা গেছে, মামলার বাদী সাজেদা বেগম কিছুদিন আগে তার শাশুড়িকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় গত ১১ আগস্ট জবি শিক্ষার্থীর পিতা শাহিনুর ও তার চাচা মিজানুর রহমানের ঝগড়া বাধে। মিজানুর ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগম শাহিনুরকে মারধর করতে তা বাড়ির সামনে আসে। একপর্যায়ে তারা শাহিনুরকে আঘাত করলে তিনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য পাল্টা আঘাত করেন।
এ ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর ডিমলা থানায় ইমরানসহ চারজনের নামে একটি মামলা করেন সাজেদা বেগম।
ঘটনার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান বাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী শুটিবাড়ি বাজারে নিজস্ব কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। সেখানকার একাধিক শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।
জানতে চাইলে জবি শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমি আমার নিজস্ব কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিচ্ছিলাম। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমার ভাই ঘটনার সময় বুড়িমারী স্থলবন্দরে ছিলেন। তাকেও মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।’
ইমরানের দাদি বলেন, ‘তিনবার মারছে। আমার মাথার চুল ধরে আমাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন আবার আমার ছোট ছেলেকে মারতে আসছে, মামলা দিয়েছে। সব কিছুর ঝামেলার মূল আমার বড় ছেলের বউ সাজেদা।’
সাক্ষীরাই বলছেন মামলা মিথ্যা!
এদিকে, মামলায় বাদীপক্ষ যাদের সাক্ষী করেছেন, তারাই বলছেন মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে। একজন সাক্ষী বলছেন, কিছু না জানিয়েই তাকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় লুটপাটের অভিযোগ করা হলেও তা সত্য নয় বলে জানিয়েছেন খোদ সাক্ষীরাই।
মামলার ১নং সাক্ষী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলার ২নং আসামি ইমরান ও ৪নং আসামি শাকিল ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলের না। তাছাড়া এখানে ওই ঝামেরার দিনে কোনো ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।’
মামলার ২নং সাক্ষী ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। যা ঘটেছে এবং দেখেছি, তা আদালতে বলবো।’
মামলার ৩নং সাক্ষী শাহিন ইসলাম বলেন, ‘সাজেদা খাতুন মামলা করেছেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে, এটা আমি পরে জানতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘২নং ও ৪নং আসামি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলে না। তবুও তাদেরকে আসামি করা হয়েছে।’
অথচ মামলার এজাহারে বলা হয়, সাজেদা খাতুনের চুল ধরে তাকে মারধর করে ইমরান। এছাড়া বাদীকে বিবস্ত্র করে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের শিক্ষার্থী ইমরান বলেছে। সাংবাদিকদের কাছেও বিস্তারিত শুনেছি। আমি নীলফামারীর পুলিশ অফিসার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বিষয়টি সমাধান করার জন্য কথাও বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে কথা দিয়েছেন।’
ডিমলা থানার ওসি (তদন্ত) বিশ্বদেব বলেন, ‘ঘটনাটি আমি জানি। এটা সামান্য বিষয় ছিল। বিষয়টি আগেই সমাধান করার জন্য বলেছিলাম। এখন মামলাটি রেকর্ড হয়েছে।’
রায়হান আহমেদ/এএএইচ/এএসএম