যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
জাল সনদের পর এবার আলোচনায় ‘নিয়োগে অনিয়ম’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জাল সনদের পর এবার আলোচনায় এসেছে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ। এই তালিকায় রয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফের নাম। এছাড়া আরও একাধিক পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদের ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর আব্দুর রউফকে যে পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেই পদে বিজ্ঞপ্তিই দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যবিপ্রবির ৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সনদ জাল ও অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় শনিবার (২৯ অক্টোবর) রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত প্রকাশ হওয়ার পর যবিপ্রবিতে নিয়োগ অনিয়মের বিষয়টিও আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আলোচনার তালিকায় শুরুতেই রয়েছেন অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদের নাম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করেই ২০০৯ সালে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান ড. ইকবাল কবির জাহিদ। ওইসময় অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের দুটি সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে অনার্স ও মাস্টার্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রভাষক হিসেবে তিন বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা অথবা পিএইচডি ডিগ্রি চাওয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ড. ইকবাল কবির জাহিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বা পিএইচডি ডিগ্রি কোনোটিই ছিল না।
অভিযোগে আরও জানা যায়, ড. ইকবাল ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আইসিডিডিআরবিতে (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ) কর্মরত ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি চাকরি হারান। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য নিবন্ধিত হলেও পরে সে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। আগের চাকরি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির ছাত্রত্ব দেখিয়ে তিনি যবিপ্রবিতে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইকবাল কবির বলেন, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি আবেদন করেছিলেন। শিক্ষকতা ও পিএইচডি ডিগ্রি সেসময় ছিল না। তবে তার ছয় বছরের (২০০৩ থেকে ২০০৯) গবেষণা এবং গবেষণাপত্র দেখে তৎকালীন নিয়োগবোর্ড তাকে নিয়োগ দিয়েছে। গবেষণাকে শিক্ষকতার ইকুইভেলেন্ট (সমতূল্য) হিসেবে ধরা হয়। সে হিসেবেই কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ দিয়েছে।
অন্যদিকে, বর্তমানে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আব্দুর রউফও একই সময়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় ওই পদে কোনো বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্রমতে, ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮টি পদে ৬১ জনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন আব্দুর রউফ। কিন্তু এই পদে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। সেই অভিজ্ঞতা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি আব্দুর রউফের আবেদনপত্রটি বাতিল করে দেয়।
তবে তার আবেদনপত্র বাতিল হলেও সেই আবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে তাকে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদে চাকরি দেওয়া হয়। যে পদের বিপরীতে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছিল না। এছাড়া সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদটি এন্ট্রি লেভেলের পদ। এই পদে নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়স চাওয়া হয় ৩০ বছর। যদিও তার দাখিল করা আবেদনপত্রে বয়স দেখানো হয় ৩১ বছর ৭ মাস ২১ দিন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, নিয়োগের জন্য আমার আবেদন ছিল সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে। কিন্তু আমার চাকরি হয় সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদে। এটা কীভাবে হয়েছে, তা সেই সময়ের নিয়োগবোর্ড বলতে পারবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, যে পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে পদে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছিল না।
জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ দেশের স্বনামধন্য একজন গবেষক। তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যত গবেষণা আছে তা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একভাগ শিক্ষকেরও নেই। তবে তাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সে সময় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা তৎকালীন নিয়োগ বোর্ডই বলতে পারবে।
আব্দুর রউফ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, তিনি সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে আবেদন করলেও তাকে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে তৎকালীন নিয়োগ বোর্ডই ভালো বলতে পারবে। তবে দুজনের দাখিল করা কাগজপত্রে কোনো ব্যত্যয় পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের করণীয় কিছু নেই। তবে তাদের বিষয়ে ইউজিসি বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো নির্দেশনা দেয় তাহলে তা প্রতিপালন করা হবে।
এসআর/জিকেএস