চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের শাটল অবরোধে ভোগান্তিতে কয়েকশ শিক্ষার্থী

নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের একাংশের কর্মীরা প্রথমে উপাচার্যের কক্ষে ভাঙচুর চালান। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী বিকেল সাড়ে ৫টার শাটল ট্রেন অবরোধ করেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ সাধারণ শিক্ষার্থী।
অবরোধকারীরা চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ‘একাকার’র কর্মী বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (৩০ জানুয়ারি) চবির ৫৪১তম সিন্ডিকেট সভা ছিল। সভায় চারটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। এতে ওশানোগ্রাফ্রি বিভাগে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগে সুপারিশ না করায় উপাচার্যের কক্ষের সামনে ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বিকেলের শাটল আটকে দেন তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মূল শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু হঠাৎ অবরোধে বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। শুরুতে ট্রেন অবরোধের কারণও শিক্ষার্থীরা জানতে পারেননি। ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পরে জানতে পারেন, ছাত্রলীগ অবরোধ করেছে এবং কখন অবরোধ তুলে নেবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পরে কয়েকশ শিক্ষার্থী বাস-সিএনজি করে শহরের দিকে যাত্রা করেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চবির ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঝামেলা হয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কিন্তু ভোগান্তিতে পড়ি আমরা। সারাদিন ক্লাস করে এভাবে হয়রানির কোনো মানে হয় না। দুই ঘণ্টা হয়ে গেলো প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এটি প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। তাছাড়া আজকে শহরে আমার টিউশন ছিল। অবরোধের কারণে টিউশন মিস হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চবি ছাত্রী বলেন, ছাত্রলীগের শাটল আটকানোর ইতিহাস পুরোনো নয়। হুটহাট কিছু হলেই ছাত্রলীগ আন্দোলনের নামে শাটল বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। মনে হয় তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তা। যখন ইচ্ছা হবে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলবে। আগামীকাল আমার পরীক্ষা। কিন্তু এখনো আমি বাসায় যেতে পারিনি। আদৌও আজকে যেতে পারি কী না নিশ্চয়তা নেই।
এ বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ‘একাকার’ গ্রুপের নেতা মইনুল ইসলাম রাসেল বলেন, আজকে সিন্ডিকেট সভায় জামায়াত-শিবির ও কোটা আন্দোলনে সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাইয়ান আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল অবরোধ করে রেখেছি। যতক্ষণ জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টদের নিয়োগ থেকে বাদ না দেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, সাড়ে ৫টার শাটলে শিক্ষার্থীদের চাপ কম থাকে। আর এইসময় সবার ক্লাস-পরীক্ষা শেষ। এত বেশি ভোগান্তিতে তারা পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।
চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। ছাত্রলীগের নাম দিয়ে যারা এসব করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি এবং শাটল সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
এমআরআর/এএসএম