বাকৃবির গবেষণা

গবাদিপশুর প্রায় শতভাগ নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বাকৃবি
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

স্বল্প ব্যয় ও অল্প সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গবাদিপশুর রক্ত পরজীবী দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে প্রায় শতভাগ নির্ভুল পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান ও তার গবেষক দল।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অর্থায়নে গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় সিরাজগঞ্জ ও রংপুরের বিভিন্ন খামার থেকে সংগৃহীত প্রায় ৫০০টি নমুনা এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. সহিদুজ্জামান বলেন, দেশে গবাদিপশুতে রক্ত পরজীবী বিশেষ করে বেবিসিয়া, থাইলেরিয়া ও এনাপ্লাজমার দ্বারা সংক্রমিত রোগের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য। এসব জীবাণুর সংক্রমণে গবাদিপশুর ওজন হ্রাস, রক্তস্বল্পতা ও দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। চিকিৎসা সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে না হলে আক্রান্ত পশুর মৃত্যুর ঝুঁকিও থেকে যায়।

গবাদিপশুর প্রায় শতভাগ নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন

তিনি বলেন, সাধারণত মাঠ পর্যায়ে এসব রোগের লক্ষণ দেখে আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়। যে কারণে চিকিৎসা ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমিত পশুর রক্তে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয়ে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। তবে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে শতভাগ সঠিক রোগ নির্ণয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। বিশ্বের অনেক দেশে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গবাদিপশুর রোগ নির্ণয় করা হলেও দেশের মাঠ পর্যায়ে এখনো এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়নি।

নিজের উদ্ভাবিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি বিষয়ে অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, প্রথমে প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করে ডিএনএ নিষ্কাশন করা হয়। নিষ্কাশিত এ ডিএনএ পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। রক্ত পরজীবীর সামান্য পরিমাণ ডিএনএ ওই নমুনায় উপস্থিত থাকলেও এ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়। প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং পিসিআরনির্ভর হওয়ায় প্রায় শতভাগ নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে এবং অনেকগুলো নমুনা একসঙ্গে পরীক্ষা করা যায়। প্রতিটি নমুনা পরীক্ষা করতে গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হয়।

রংপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জোবাইদুল কবীর বলেন, বেবিসিয়া, থাইলেরিয়া ও এনাপ্লাজমা—এ তিনটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে আগে তেমন একটা ছিল না। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চ উৎপাদনশীল গবাদিপশুর জাতগুলোতে রোগগুলো মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। যে কারণে ডেইরি ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমরা ব্যাপক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি।

গবাদিপশুর প্রায় শতভাগ নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন

তিনি বলেন, আঞ্চলিক প্রাণিরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে (এফডিআইএল) জিমসা স্টেইনিংয়ের মাধ্যমে এ রোগগুলো নির্ণয় করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ জনবল। অনেক সময় থাইলেরিয়া ও এনাপ্লাজমা নির্ণয়ে তারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান। যে কারণে সঠিক ফলাফলও অনেক সময় পাওয়া যায় না।

অধ্যাপক সহিদুজ্জামানের উদ্ভাবনের প্রশংসা করে ড. জোবাইদুল বলেন, ডিএনএ পর্যায়ে গবাদিপশুর রোগ নির্ণয়ের যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে, এটি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করতে পারলে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, বেবিসিয়া আক্রান্ত পশুর মূত্র কফির মতো রঙের হয়। মূত্র দেখে বেবিসিয়া রোগ নির্ণয় করা গেলেও থাইলেরিয়া ও এনাপ্লাজমা লক্ষণ দেখে নির্ণয় করা যায় না।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।