ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গণসমাবেশ

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও স্বাধীনতাকামীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে চার দফা দাবিতে গণসমাবেশ ও র‌্যালি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের পতাকা দাহ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি র‌্যালি বের করেন তারা। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ফের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যায় দায়সারা বক্তব্য দেওয়া ছাড়া জাতিসংঘ কিছুই করছে না। যুগযুগ ধরে চলা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, গণহত্যা ও বর্বরতায় নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে তাদের মুখে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।

দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করা, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি ও ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়া, গণহত্যার জড়িত থাকার অপরাধে জায়নবাদী ইসরায়েলের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা পরিষদে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত তৈরি করা।

সমাবেশে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাদ বলেন, সারাবিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসরায়েলের একচক্ষু নীতি আর সইতে পারছে না। তাই সারা বিশ্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করছে। আমি আনন্দিত যে জাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে যোগ হয়েছে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের এ আন্দোলনে আমি একাগ্রতা পোষণ করছি।

সমাবেশে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ফিলিস্তিনের সমস্যা ৭৭ বছর আগে গোড়াপত্তন হয়েছে। জোরপূর্বক ফিলিস্তিন দখল করে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘকে ইসরায়েলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইসরায়েলকে নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করা ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশীয় পর্যায়েও ইসরায়েলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আছে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতিটি শিশুর মৃত্যু দেখে মনে হয় তারা আমার সন্তান। ফিলিস্তিনে যে হত্যা চলছে, তার উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনের সম্পূর্ণ ভূমি দখল করা। সম্প্রতি জাতিসংঘে যুদ্ধ বিরতির জন্য নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দুই বার ভোট দিয়েছে। এটা থেকেই প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রই বর্তমানে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তারা ভেটো দিয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তাই বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে এবং তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াহিয়া জিসান, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ তন্ময়, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া প্রমুখ।

মাহবুব সরদার/আরএইচ/এএসএম