কলেজছাত্রী তনু হত্যা
দায়িত্ব নেওয়ার ৭ মাস পর ঘটনাস্থলে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৯ বছরে মামলার তদন্ত সংস্থার পরিবর্তন হয়েছে চারবার। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে ছয়জনকে। সবশেষ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম।
দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাস পর একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে সোমবার (৭ মার্চ) কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাত মাস আগে তনু হত্যার মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা হয়নি। আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে পিবিআইয়ের একটি টিম নিয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এটি মামলার তদন্তের নিয়মিত কার্যক্রমের একটি অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তনুর পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করার জন্য।’
এ বিষয়ে তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা থেকে আসবেন, সেটা আমাদের আগে জানাননি। দুপুরে ঘটনাস্থলে আসার পর আমাদের জানানো হয়েছে। বিকেল ৪টার দিকে তদন্ত কর্মকর্তা আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেন।’
মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত ৯ বছরে মামলার অগ্রগতি বলতে শুধুই তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন। আমরা এসব নাটক আর দেখতে চাই না। খুনিদের বিচার চাই। আমার মেয়ে কবরে আর খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে—এ কথা ভাবতেই কষ্টে বুকটা ফেটে যায়।’
তনুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর শুরুতে থানাপুলিশ, পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দীর্ঘ সময় ধরে মামলাটি তদন্ত করেও কোনো কূলকিনারা পায়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তনু হত্যা মামলার নথি পিবিআইয়ের ঢাকা সদর দপ্তরে হস্তান্তর করে সিআইডি। প্রায় চার বছর মামলাটি তদন্ত করেন পিবিআই সদর দপ্তরের পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমান। সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটির ষষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান তরিকুল ইসলাম।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করাতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তনু। পরে খোঁজাখুঁজি করে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপের মধ্যে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে ধারণা।
পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ খুঁজে না পাওয়ার তথ্য জানায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।
২০১৭ সালের মে মাসে তনুর পোশাক থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানায় সিআইডি। এছাড়া তনুর মায়ের সন্দেহ করা তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে ওই সময়ে তাদের নাম গণমাধ্যমকে জানায়নি সিআইডি।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এমএস