বোরো ধানের ফলনে খুশি, শেষ সময়ে ঝড়-বৃষ্টিতে বিপাকে কৃষক
ঝিনাইদহে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সার-কীটনাশকের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় ধানের আবাদে এবার লাভের আশায় দিন গুনছেন কৃষকরা। জেলার মাঠে মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সোনালী ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষক পরিবারগুলোতে ছড়িয়েছে খুশির আমেজ।
তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের আকস্মিক বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় অনেক এলাকার ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেই সঙ্গে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে বিড়ম্বনায় পড়েছেন কৃষক। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় মৌসুমের শেষ সময়ে এসে কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নে সোনালী ধানের বিস্তীর্ণ মাঠে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। উপজেলার কোলা ইউনিয়নের অনেক মাঠের ধান এরই মধ্যে কেটে ফেলেছেন তারা। তবে গত সপ্তাহে কয়েক দফা আকস্মিক বৃষ্টিপাতে অনেক কৃষকের ধান ভিজে গেছে। ভিজে যাওয়া ধান মাঠেই শুকাচ্ছেন অনেকেই।
এছাড়া সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া, রামনগর, ভবানীপুর, মায়াধরপুর, বৈডাঙ্গা, গোপালপুর এলাকার বিস্তীর্ণ ধানের মাঠে প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কেটে ফেলেছেন কৃষকেরা। কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের কাজও সম্পন্ন করেছেন। কৃষকের উঠোনে উঠোনে এখন ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। তবে নিচু এলাকার জমিগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক ধান বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। ফলে এসব ধানের ওজন ও মান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন, গোপালপুর গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র ও কালীগঞ্জের কোলা গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, এবার বোরো ধানের আবাদ অত্যন্ত ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এবার তাপপ্রবাহ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ঘটনাও কম ঘটেছে। যে কারণে পাকা ধানের ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা হয়নি।

কৃষকরা জানান, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে জেলার প্রায় সব এলাকাতেই কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। এতে মাঠের নিচু জমিগুলোতে পানি জমেছে। ফলে অনেক ধান পানিতে ভিজে গেছে। এতে কৃষকরা ধানের দাম হয়তো কিছুটা কম পেতে পারেন। তবে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের সার্বিক ফলন নিয়ে খুশি তারা।
কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার আলী বলেন, ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এবার সার-কীটনাশকের দামও নাগালে ছিল। কিন্তু শেষ সময়ের বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়ায় ধান গোছানো নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অনেকেই মাঠ থেকে ধান মাড়াই করে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে করে গোখাদ্য (বিচালি) সংকট হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় মোট ৯০ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৫ হাজার ৯৫৬ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৬ হাজার ৬৫ হেক্টর, মহেশপুরে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর, শৈলকূপায় ১৩ হাজার ২১৮ হেক্টর ও হরিণাকুণ্ড উপজেলায় ৯ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে জেলায় মোট ৯০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সার-কীটনাশকের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক তদারকির ফলে ভালো ফলন হয়েছে। এবার কৃষক ধানের ভালো দাম পাবেন বলে আশাবাদী। তবে শেষ সময়ের বৃষ্টিতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কিছুটা বেগ পাচ্ছেন কৃষকরা। তবে এতে কৃষক খুব বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন না।
শাহজাহান নবীন/জেডএইচ/এএসএম