সন্তান প্রসব করেই মৌখিক পরীক্ষা দিলেন হাজেরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ১৫ মে ২০২৫
স্বামী-সন্তানের সঙ্গে হাজেরা খাতুন

সকাল পর্যন্ত ছিলেন একজন অন্তঃসত্ত্বা। দুপুরে হলেন মা। এর ঠিক কিছুক্ষণ পরেই সময় চলে আসে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার। সন্তান কোলে নিয়েই দিলেন মৌখিক পরীক্ষা। সন্ধ্যায় ফিরে যান বাড়ি।

বুধবার (১৫ মে) এমন ঘটনাই ঘটে। অদম্য ওই মায়ের নাম হাজেরা খাতুন। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চরবজরা গ্রামের বাসিন্দা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষার্থী হাজেরা খাতুন। বুধবার ছিল তার মৌখিক পরীক্ষা। পরীক্ষা দিতে সকালেই স্বামী আবদুর রশিদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে করে হাজেরা পৌঁছান হাতীবান্ধায়। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তেই শুরু হয় তার প্রসববেদনা।

সন্তান প্রসব করেই মৌখিক পরীক্ষা দিলেন হাজেরা

পরিস্থিতি বুঝে কলেজ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তাকে দ্রুত ভর্তি করা হয় হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

শুধু এখানেই থেমে থাকেননি হাজেরা। সন্তান জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও মাইক্রোবাসে করে কলেজে ফিরে আসেন তিনি। মানবিক বিবেচনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ মাইক্রোবাসের ভেতরেই তার মৌখিক পরীক্ষা নেয়। এরপর সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে নবজাতক সন্তানসহ গ্রামে ফিরে যান তিনি।

নিজের সংকল্পের কথা জানিয়ে হাজেরা খাতুন বলেন, ‘মাস্টার্স শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। পরিবারের পাশে থাকতে চাই। সন্তানদের মানুষ করতে চাই।’

সন্তান প্রসব করেই মৌখিক পরীক্ষা দিলেন হাজেরা

হাজেরার স্বামী আবদুর রশিদ একজন পল্লি প্রাণীচিকিৎসক। তাদের একটি চার বছরের কন্যাসন্তানও রয়েছে। তিনি জানান, পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতালের সহযোগিতায় নিরাপদ প্রসব হয়েছে। পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে হাজেরা।’

হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আনারুল হক জানান, হাজেরার স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন। সন্ধ্যায় তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

হাতীবান্ধা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। পরবর্তী সময়ে নবজাতকসহ মাইক্রোবাসে ফিরলে সেখানেই তার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমরা সবাই তার সংকল্প দেখে মুগ্ধ।’

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।