চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় বেহাল ড্রেন-সড়কে জলদুর্ভোগ

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৫

 

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ড্রেন ও সড়কে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা এখন চরম নাগরিক দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের অধিকাংশ এলাকায় রাস্তায় পানি জমে ও ড্রেন উপচে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগের এ চিত্র এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা জনদুর্ভোগ কমাতে সতর্ক রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই এ সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বুজরুকগড়গড়ী বনানীপাড়া, শান্তিপাড়া, সবুজপাড়া, সাদেক আলী মল্লিকপাড়া, পলাশপাড়া, গুলশানপাড়া, মুক্তিপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া ও মসজিদপাড়ার অবস্থা খুবই করুণ। এসব এলাকায় কোথাও পিচ উঠে গর্ত হয়েছে, কোথাও ড্রেন ভেঙে পানি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে। ড্রেনের মুখে আবর্জনার স্তূপ থাকায় পানি অনেক জায়গায় বসতঘরে ঢুকে পড়ছে।

পলাশপাড়ার বাসিন্দা পিয়াল খান বলেন, বর্ষা এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। রাতে শিশুদের নিয়ে চলাচল করাটা যেন এক দুঃসাহসিক কাজ।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় বেহাল ড্রেন-সড়কে জলদুর্ভোগ

গুলশানপাড়ার মুস্তাফিজুর রহমান কনকের অভিযোগ, তিন বছরেও ড্রেন পরিষ্কার হয়নি। মুখ বন্ধ হয়ে আছে, পানি বের হতে পারে না। বর্ষায় পুরো এলাকা জলে থইথই করে।

বনানীপাড়ার আক্তার হোসেন বলেন, অনেক বার অভিযোগ করেছি। কাউন্সিলর এসে ছবি তুলে প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে।

পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আনিসুজ্জামান জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় চারটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এতে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে গুলশানপাড়ায় ৬৫ লাখ, সিনেমা হলপাড়া ও কাঠপট্টিতে ১ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার, জেলখানা সংলগ্ন এলাকায় ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় বেহাল ড্রেন-সড়কে জলদুর্ভোগ

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন প্রশস্তকরণ ও পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুয়াডাঙ্গা শহরের এ করুণ দশা। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই এই দুর্দশার মূল কারণ। সঠিক মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম কখনও টেকসই হবে না।

প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি সমন্বিত রুটম্যাপ প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি বলে জানান তারা।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় বেহাল ড্রেন-সড়কে জলদুর্ভোগ

চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা তাই ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের বলেছি জনভোগান্তি হয় এমন কোনো কাজ না করতে। আমরাও খোঁজ খবর রাখছি।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার আয়তন ৩৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভাটি মোট ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ১৯৭২ সালে ২০ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌসভায় রূপান্তরিত হয়। তখন এটি তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা ছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ২৭ আগস্ট দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়।

এমএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।