শহীদের স্ত্রীর আবেগঘন স্ট্যাটাস
প্রথম বিবাহবার্ষিকীর আগেই তুমি আমাকে বিধবা করে চলে গেলা
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। দেশজুড়ে তখন স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে। ওইদিন কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সেলিম তালুকদার।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম তালুকদার। ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩১ জুলাই রাতে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সেলিমের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন।
৪ আগস্ট দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তার।
২০২৩ সালের ৪ আগস্ট সেলিম তালুকদারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সুমী আক্তার। সে হিসেবে ৪ আগস্ট তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। তাদের ৬ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দেওয়া স্ট্যাটাসে সুমী আক্তার লিখেছেন, ‘Mohammad Selim Talukder আমার বীর শহীদ সেলিম। আজ (৪ আগস্ট) আমাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। আমার জীবনে সবথেকে বেশি কষ্ট তুমি এখন কবরে আর আমি দুনিয়ায়। আমাদের সারাজীবন একসাথে থাকার কথা ছিল কিন্তু আমাদের নিয়তির কাছে হার মানতে হলো। প্রথম বিবাহবার্ষিকীর আগেই তুমি আমাকে বিধবা করে চলে গেলা। আমি কখনো ভাবি নাই আমার জীবন শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে আজকে শুরু করছিলাম আমরা একটা নতুন জীবন। একটা সুন্দর সংসার হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো। ২০২৩ এর ৪ আগস্ট আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমাকে আমার করে পেয়েছিলাম। কত সুন্দর ছিল তোমার সাথে কাটানো সময়গুলো। আমি অনেক সময় ভাবতাম তোমার বুকে মাথা রেখে আমি যে শান্তি পেতাম; আমার তখন মনে হতো, জান্নাতের শান্তি হয়তো এমন। কিন্তু আমার কপালে সুখ শান্তি বেশি দিন ছিল না। ২০২৪ এর ৪ আগস্ট আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল আর ২০২৪ এর ১ আগস্ট আমাকে বিধবা করে চলে গেলা।’
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সুমী আক্তার বলেছেন, ‘তারপরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে, আমাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছে। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট আমি জানতে পারছি, আমি মা হবো আর আমার সেলিম বাবা হবে। আফসোস আমার সেলিম তা জানতে পারলো না। আমার আল্লাহর কাছে বেশি কিছু আর চাওয়ার নেই। আল্লাহ যেন আমার সেলিমকে অনেক ভালো রাখে। তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করে। আর বাকিটা জীবন তার স্মৃতি নিয়ে আমাদের সন্তানকে নিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার তৌফিক দান করে।’
স্ট্যাটাসের শেষের দিকে শহীদের স্ত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের আবার দেখা হবে ওই আখিরাতে, আমরা আবার এক হবো। আল্লাহ আমাকে আরও অনেক ধৈর্য দান করার তৌফিক দিক। আল্লাহ আমাকে দুনিয়ার এই কষ্টের বিনিময়ে আখিরাতে আমার সেলিমকে পুরস্কার হিসেবে যেন দেয়। ওই জান্নাতে আমরা একসাথে থাকতে পারি যেখানে কোনো বিচ্ছেদ নেই। চিরস্থায়ী থাকবো একসাথে।’
মো. আতিকুর রহমান/এসআর/এমএস