পাহাড়ে প্রার্থনায় শুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা উৎসব

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

 

সমবেত প্রার্থনা, ছোয়াইং দান ও ধর্মীয় দেশনার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বিহারে বিহারে ছোয়াইং দান সমবেত প্রার্থনা ও ধর্মীয় দেশনায় অংশ নেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ। প্রবারণা ঘিরে পাহাড়ি পল্লিগুলোতে চলছে নানা আয়োজন। ফানুস ওড়ানো, পিঠা তৈরি, রথ টানাসহ নানা আয়োজনে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৩ দিনব্যাপী চলবে এ উৎসব। তাই উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।

jagonews24

বিকেলে ওড়ানো হবে প্রবারণা পূর্ণিমার প্রধান আকর্ষণ ফানুস বাতি। এসময় সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে বান্দরবান জেলা। তাই যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

মূলত আর্শিণী পূর্ণিমা থেকে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাবাস পালনের পর পালন করা হয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যোয় পোয়ে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে, প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল। তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি আজও বিশেষভাবে স্মরণীয়। তাই নানা আয়োজনে উৎসবটি পালন করে থাকেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। পাড়ায় পাড়ায় পিঠা তৈরি, ফানুস ওড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রথসহ টানা হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন ও নানা আয়োজনে ৩ দিনব্যাপী পালিত হবে প্রবারণা উৎসব। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মারমা বয়-বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোররা এদিন সকালে বিহারে বিহারে গিয়ে ধর্মীয় গুরুদের চোয়াইং দান (ভান্তেদের ভালো খাবার পরিবেশন) করেন এবং সকালেই সমবেত প্রার্থনা ও সন্ধ্যায় মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জলনে অংশ নেন।

আরও পড়ুন
পটুয়াখালীতে মা ইলিশ রক্ষায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা, ড্রোনে পর্যবেক্ষণ 
নাটোরে ঘরে ঢুকে বৃদ্ধাকে হত্যা, স্বর্ণালংকার লুট 
সম্মেলনের দুই মাসেও হয়নি কমিটি, কার্যক্রমে অচলাবস্থা 

এদিকে উৎসবকে ঘিরে পাড়ায় পাড়ায় চলছে রথ তৈরি ও ফানুস বানানোর কাজ। মারমা তরুণ-তরুণীরা দল বেধে তৈরি করছে রং বেরঙের ফানুস। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিহারে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জার কাজ।

মারমা তরুণ-তরুণীরা বলেন, এই দিনের জন্য আমরা একটি বছর অপেক্ষা করে থাকি। এ বছর আমরা অনেক আনন্দ করবো। সকাল সকাল খেয়াংয়ে এসেছি, ছোয়াইং দান করেছি, প্রদীপ জালিয়েছি এবং প্রার্থনা করেছি। বিকেলে আমরা সবাই মিলে ফানুস বাতি ওড়াবো। সব মিলিয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমায় বন্ধু-বান্ধব ও স্বজন মিলে আনন্দ বিনিময় করবো।

jagonews24

অন্যদিকে প্রবারণা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালনে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার। তিনি বলেন, এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। তাই এ উৎসবটি যেন উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারে সেজন্য কয়েক স্তরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডিউটি করবে। আশা করি এ ধর্মীয় উৎসবটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করতে পারবে।

ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের উৎসব। আর এই প্রাণের উৎসবে ভগবান বুদ্ধকে মনের আশা পূরণের জন্য কাগজের ফানুস বাতি তৈরি করে তাতে আগুন দিয়ে আকাশে উড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল, তাই বুদ্ধের ত্রিশুল বিজড়িত এ দিনটি প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় হয়ে আছে। আগামী ৭ অক্টোবর রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনব্যাপী এই প্রবারণা উৎসব।

নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।