ছেলের মামলায় বাবা-সৎমাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কবির তালুকদার ও এলাচী বেগম

পারিবারিক কলহের জেরে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাকে হত্যার দায়ে ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসির রায়) দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জেলা ও দায়রা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজুয়ারা সিপু সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচী বেগম (৫০) ও নিহতের মেয়ের জামাই ও এলাচী বেগমের ছেলে সুজন (৩০)।

আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে কবির তালুকদার মহিমা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। তবে যৌতুকের দাবিতে কবির প্রায়ই স্ত্রী মহিমাকে নির্যাতন করতেন। এছাড়াও মেয়ে রেখা বেগমকে বিয়ে দেওয়ার পর মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমের স্বামী না থাকায় তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কবির।

এর মধ্যে একদিন বাবা ও শাশুড়িকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে প্রতিবাদ করেন রেখা। এ ঘটনার পর শাশুড়ি এলাচী বেগম এবং স্বামী সুজন রেখার ওপর নির্যাতন শুরু করেন।

এর মধ্যেই কবির তার মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। রেখা বেগম (নিহত মহিমার মেয়ে) এই আপত্তিকর দৃশ্য দেখে প্রতিবাদ করলে এলাচী ও তার ছেলে সুজন রেখার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে ক্ষোভে রেখা আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনার চার বছর পর মহিমা বেগমের অমতে কবির তার মেয়ের শাশুড়ি এলাচী বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এতে মহিমা বেগমের সঙ্গে বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এরপর কবির, এলাচী ও তার ছেলে সুজন মিলে মহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর সকালে তারা মহিমা বেগমকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করেন এবং ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে নিহতের ছেলে হেলাল তালুকদার বিষয়টি বুঝতে পেরে পাথরঘাটা থানায় একটি মামলা করেন।

ওই মামলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে কবির তালুকদার ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচি বেগম ও তার ছেলে সুজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত।

মামলার বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, তার মায়ের হত্যার বিচার হওয়ায় তিনি খুশি, তবে নিজ বাবার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি কষ্টও প্রকাশ করেন।

বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রনজুয়ারা সিপু জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিভিন্ন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।

নুরুল আহাদ অনিক/কেএইচকে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।