৩ বছর ধরে দ্বিতীয় স্বামীর সংসার, পেনশন তুলছেন প্রথম স্বামীর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি

প্রায় তিন বছর ধরে সংসার করছেন দ্বিতীয় স্বামীর। অথচ নিয়মবহির্ভূতভাবে তুলে যাচ্ছেন প্রথম স্বামীর সরকারি পেনশনের টাকা। তথ্য গোপন করে পৌরসভা থেকে নেওয়া প্রত্যয়ন দাখিলে হিসাবরক্ষণ অফিসের চোখে ধুলা দিয়ে মাদরাসা শিক্ষিকা আফরোজা খাতুন এমন প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা পাবনা সদর পৌর এলাকার আশরাফ আলীর মেয়ে। তিনি জেলার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর ত্বহা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।

তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল মারা যান আফরোজা খাতুনের প্রথম স্বামী দাপুনিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুরের বাসিন্দা ও গয়েশপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মহিউল আলম। এরপর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে ওই মাস থেকেই মহিউল আলমের স্ত্রী হিসেবে পেনশন ভাতা গ্রহণ করতে শুরু করেন আফরোজা খাতুন। পরে ২০২২ সালে ৪ মে গয়েশপুর এলাকার আব্দুস সোবহান শেখের ছেলে আলাউদ্দিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে করা এ বিয়ের হলফনামার কপি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিয়ে করায় আফরোজা ওই তারিখ থেকেই প্রথম স্বামীর পেনশন ভাতা গ্রহণে অযোগ্য। তারপরও তিনি তা গোপন করে পেনশন তুলছেন।

অভিযোগের সূত্র ধরে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে জানা যায়, পেনশন গ্রহীতাদের সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর লাইফ ভেরিফিকেশনের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করেননি মর্মে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়নসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। আফরোজা খাতুন পৌর এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তিনি চলতি বছরের জুলাই মাসেও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দুলাল উদ্দিন সাক্ষরিত প্রত্যয়ন দাখিল করেছেন। যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, অদ্যাবধি তিনি দ্বিতীয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। এভাবে প্রতি বছর লাইফ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে তার স্বামীর পেনশন বহাল থেকেছে। প্রত্যয়নের বিষয়টি হিসারক্ষণ অফিস দেখে না বলেও জানানো হয়।

প্রত্যয়নের বিষয়ে পাবনা পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা দুলাল হোসেন বলেন, ‘সাধারণত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়। তবে অনেকেই বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন। এমনকী সামাজিক ও পারিবাবরিকভাবেও দারুণভাবে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ফলে অনেক সময় তদন্তে সেটি ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। আফরোজার প্রত্যয়নের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে আফরোজা খাতুনের কর্মস্থল পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার শিবপুর ত্বহা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় গেলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে দেখা করেননি।

মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম ইয়াসিন বলেন, ‘এগুলো তার ব্যক্তিগত বিষয়। এসব বিষয়ে মাদরাসায় তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই।’

পরে আফরোজা খাতুনের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার ব্যবহৃত আরেকটি নম্বরে ফোন করা হলে পরিচয় না দিয়ে এক নারী ফোন রিসিভ করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ফোন রেখে দেন।

এ বিষয়ে আফরোজা খাতুনের বাবা আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আফরোজার দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আফরোজা ও আলাউদ্দিন পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। আমরা পরে তা জেনেছি। এ বিয়ের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

আফরোজার বর্তমান স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী আলাউদ্দিন বলেন, ‘২০২২ সালে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার পারিবারিক ভরণপোষণ ও খরচের সব দায়িত্বই আমি পালন করেছি। কিন্তু সে আমার সঙ্গেও প্রতারণা করে একাধিকবার অসামাজিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি তাকে সংশোধনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তার অপকর্মের দায়ভার আমার নয়।’

জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অধীক্ষক আইনুর রহমান বলেন, ‘পেনশন হোল্ডার দ্বিতীয় বিয়ে করলে প্রথম স্বামীর উত্তরসূরী হিসেবে ভাতা গ্রহণের সুযোগ নেই। পৌর বা ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নের ভিত্তিতে প্রতিবছর নীতিমালা অনুযায়ী লাইফ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে পেনশন বহাল রাখা হয়। এক্ষেত্রে কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে তা প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গে ভাতা প্রদান বন্ধ করা হয়। অবৈধ প্রক্রিয়ায় উত্তোলিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘মহিউল আলমের স্ত্রীর বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আলমগীর হোসাইন/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।