চিকিৎসা উপকরণ সঙ্কটে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স


প্রকাশিত: ০৭:১৮ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি ওষুধসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত এক বছর ধরে এই সঙ্কট চলছে। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উপকরণ না পাওয়ায় রোগী ও তাদের স্বজনদের বাইরে থেকে বাড়তি দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গরিব ও দুস্থ রোগিরা।
 
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসক, সেবিকাসহ জনবলেরও অভাব রয়েছে। ফলে বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় রোগীদের মেঝে কিংবা বারান্দায় রেখে সেবা দেয়া হচ্ছে।

২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর থেকে কাগজে-কলমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করে। এরপর থেকে রোগীদের কাছ থেকে ৫০ শয্যার জন্য সেবামূল্য আদায় করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে আজও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হয়নি। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাণরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধসহ রক্তের ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জামাদিরও সঙ্কট রয়েছে।
 
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সিংগা গ্রামের ফিরোজা বেগম (৬০) হাসপাতালের ১১ নম্বর বেডে ভর্তি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন। ডাক্তার বলেছেন, তার শরীরে এখন রক্ত উৎপাদন হয় না। তাই বাড়ির সদস্যদের সহযোগিতায় চিকিৎসকের পরামর্শ মতে প্রায়ই তার শরীরে রক্ত দিতে হয়। সঙ্গে থাকেন পুত্রবধূ তানিয়া সুলতানা।

রক্তের ব্যাগ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরকারিভাবে পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় বছর খানেক ধরে শাশুড়ির শরীরে রক্ত দিতে হয়। এক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। কিন্তু কোনোদিনও রক্তের ব্যাগ বিনামূল্যে হাসপাতাল থেকে পাইনি।

সমাজকর্মী লিয়াকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জন্য উপজেলায় রয়েছে একটি মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অসহায় ও গরিব রোগিদের রক্তের প্রয়োজন হলেও এখানে নেই কোন ব্লাড ব্যাংক। তাছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধও বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু নজরদারি প্রয়োজন।
 
হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) সুষমা মল্লিক বলেন, এ বছর মোট ২৭০ ব্যাগ রক্ত রোগিদের দেওয়া হয়েছে। দিন দিন এ ধরনের রোগির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক রক্তের ব্যাগ সরবরাহ নেই। বছরের শুরুতে নড়াইল সিভিল সার্জন অফিস থেকে মাত্র ৫০ ব্যাগ পেয়েছিলাম যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
 
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বিএম কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, গরিব ও দুস্থ রোগীদের জন্য লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং রক্তের ব্যাগ থাকা প্রয়োজন। যদি রক্তের ব্যাগ সরবরাহ কম থাকে তাহলে অবশ্যই প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ বৃদ্ধি করা উচিত।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন নাহার বলেন, রক্তের ব্যাগের বর্তমানে সরবরাহ নেই। তাই হাসপাতাল থেকে রোগীদের এই সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

হাফিজুল নিলু/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।