শেরপুরে ২৩ মার্চ ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা
২৩ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরে শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সেসময় শত শত প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্য দিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ‘জয়বাংলা’ লেখা এ পতাকা উত্তোলন করেন।
পতাকা উত্তোলনের এ অগ্রনায়করা হলেন, তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা আমজাদ হোসেন, মোজাম্মেল হক, ফকির আক্তারুজ্জামান, আব্দুল ওয়াদুদ অদু, লুৎফর রহমান মোহন, আহসান উদ্দিন, আব্দুস সাত্তার প্রমূখ। এখনও ওই পতাকাটি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম শেরপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ফকির আক্তারুজ্জামানের কাছে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ফকির আক্তারুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর থেকেই শেরপুরের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা আরো প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো শেরপুর এলাকা। চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। এছাড়া আন্দোলনকারী ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
তিনি বলেন, তখন আমরা শেরপুরের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বাংলাদেশের পতাকা কেমন হবে তা নিশ্চিত ছিলাম না। তাই স্থানীয়ভাবে নিজেরা ধারণা করেই মানচিত্রখচিত ওই পতাকাটি তৈরি করেছিলাম। তখনকার দর্জি দুদু খলিফা পতাকাটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। একসময় শেরপুরে এ দিনটি পতাকা উত্তোলন দিবস হিসেবে পালন করা হলেও এবার এ নিয়ে কোনো কর্মসূচির সংবাদ জানা যায়নি।
মুক্তিযোদ্ধা তালাপতুপ হোসেন মঞ্জু জানান, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সংগ্রাম কমিটি ছাত্র-জনতাকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে। সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) বাসভবনটি। এছাড়া বর্তমান সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় আড়াইআনি বাড়ির আম্রকাননে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনরি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
শেরপুর থানা থেকে সংগৃহীত কয়েকটি বন্দুক দিয়ে সেখানে ছাত্র-যুবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১ এপ্রিল ভারত সীমান্ত ঘেঁষা ঝিনাইগাতী থানার রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে স্থাপন করা হয় প্রশিক্ষণ শিবির। শেরপুরের ১২ জন যুবক এ প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা যখন সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ নিতে থাকে তখন একাত্তরের ঘাতক বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় আলবদর-রাজাকার বাহিনী।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড দেন। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হয়।
হাকিম বাবুল/এফএ/পিআর