পার্বত্য ভূমি কমিশন কার্যত অচল
সক্রিয় হতে পারছে না পার্বত্য ভূমি কমিশন। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এ কমিশন। এর মূল কারণ হচ্ছে আইনি জটিলতা। ফলে গঠনের পর থেকে অচলাবস্থায় পড়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কশিনের কর্মকাণ্ড শুরু করা হলেও সেগুলোর কোনো অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি সর্বশেষ রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক পরবর্তী সংসদ অধিবেশনে কমিশনের সংশোধনী বিল উত্থাপন করে তা পাস করার কথা বলেন। কিন্তু এর পরে সংসদ অধিবেশন বসলেও বিলটি উত্থাপন করা হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটির প্রধান কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভা শেষে গওহর রিজভী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষে দ্রুত কমিশনকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য শিগগিরই কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধন করে আইনি জটিলতা দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দ্রুত আইনের সংশোধনী বিল পাস করা হবে। আইনটি সংশোধন করা হলে দ্রুতগতিতে কমিশনের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী সরকার পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করলেও আইনি জটিলতার কারণে আজ পর্যন্ত কোনো কাজ করতে পারেনি কমিশন। এছাড়া কমিশন আইনে বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারা সংশোধনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সভায় পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও তিন সার্কেল চিফ অনুপস্থিত থাকার কারণে ওইসব সভায় কোরাম সংকট দেখা দেয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন।
অপর এক সূত্রে জানা যায়, ভূমি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধনের জন্য যেসব প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল সেগুলো দীর্ঘ প্রায় সাত বছরেও সংশোধিত হতে পারেনি। আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলেও আজ পর্যন্ত তা সংসদে বিল পাস করানো হয়নি। ফলে পার্বত্য ভূমি কমিশন থাকলেও তা কার্যত এখনও অচল।
গত সরকারে পুনর্গঠিত পার্বত্য কমিশনটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হককে চেয়ারম্যান করে নতুন কমিশন গঠন করে সরকার। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলো সংশোধন করার দাবি জানিয়ে আসছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।
এদিকে ভূমি বিরোধের জের ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় সময় ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিরোধ নিস্পত্তি না হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি সংক্রান্ত মামলার জট বাড়তে চলেছে। বর্তমানে শুধু রাঙ্গামাটি জেলায় প্রায় ৩৮ হাজার ভূমিহীন মানুষের বন্দোবস্তুর আবেদন জমা আছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ মামলারগুলোর দ্রুত নিস্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
সূত্র মতে, এর আগের সরকারের আমলে প্রস্তাবিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ সংশোধনী বিলে ওই সময়ের ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কোনো মতামতও দেয়নি। রহস্যজনকভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় বিলটি। সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল জাতীয় সংসদে পাস করানো হয়নি।
জানা গেছে, গত ২০১৩ সালের ২৭মে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ বিল মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয়। পরে একই সালের ৩জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিলটি অনুমোদিত হয়। ১৬জুন সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। বিধি অনুযায়ী মতামত চেয়ে বিলটি ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিলো।
সুশীল চাকমা/এসএস/এমএস