বর্ষায় জমে ওঠে নড়াইলের নৌকার হাট


প্রকাশিত: ০৫:১২ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৫

জমে উঠেছে রামসিদি ও তুলারামপুরের নৌকার হাট। প্রতি বছরের ন্যায় বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই জমে ওঠে নড়াইল সদর উপজেলার বাসগ্রাম ইউনিয়নের ডহর রামসিধি ও তুলারামপুর ইউনিয়নের তুলারামপুর গ্রামের নৌকার হাট। প্রতিটি ঘরেই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নৌকা। প্রতি বুধবার ডহর রামসিদিতে এবং প্রতি শুক্রবার তুলারামপুরে নৌকার হাট বসে।

প্রায় ৬৫/৭০ বছর ধরে পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ হাটে দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা কিনতে ছুটে আসেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ ক্রেতারা।
প্রতি হাটে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার নৌকা কেনাবেচা হয়।

এ বিষয়ে রামসিদির আজিবর শেখ জাগো নিউজকে জানান, দক্ষিণাঞ্চলের নৌকা কেনাবেচার অন্যতম হাট ডহর রামসিদি।
খুলনার ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, ডুমুরিয়া, ও দিঘলিয়া, যশোরের অভয়নগর ও বাঘারপাড়া, মাগুরার শালিখা ও মহম্মদপুর, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, মকসুদপুরসহ অনেক এলাকা থেকে লোকজন এ হাটে নৌকা কিনতে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত রামসিধি গ্রাম। গ্রামের প্রায় দুই হাজার কৃষি পরিবার শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজের পাশাপাশি নৌকা তৈরি করেন।
 
পুরুষের পাশাপাশি গ্রামের নারীরাও এ কাজে পারদর্শী। বাসগ্রাম-মীরাপাড়া সড়কের ডহর রামসিধি গ্রামের প্রায় আধা কিলোমিটার গ্রাম্য রাস্তার দুপাশের জলাশয়সহ রাস্তার ঢালে সারিবদ্ধভাবে কয়েকশ নৌকা রেখে বেচাকেনা চলে। নড়াইল যশোর রোডের তুলারামপুরে রাস্তার পাশে নৌকা কেনাবেচা হয়ে থাকে।

নৌকা কিনতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র বাহন। প্রতিদিন কৃষকরা জমি থেকে ফসল আনা-নেওয়া এবং খাল-বিলে চাই, ঘুনি ও দোয়ার পেতে মাছ ধরার কাজে নৌকা ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া ঘাস কাটা এবং শাপলা, শামুক ও ঝিনুক কুড়াতে নৌকা অপরিহার্য। তাই রামসিধি ও তুলারামপুরে নৌকার হাট এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণে মুখরিত।

রামসিদি গ্রামের প্রবীন নৌকা-কারিগর নিরাপদ সরকার জাগো নিউজকে জানান, একটি নৌকা বিক্রি হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায়। আবার কোনো কোনো নৌকা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তিনি বলেন, পুয়ো গাছের কাঠের নৌকা বেশি ভালো হয়। এছাড়া অন্যান্য গাছের কাঠ দিয়েও নৌকা তৈরি হয়ে থাকে।

তেরখাদা উপজেলার তেরখাদা গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী হারুন মোল্যা জাগো নিউজকে জানান, তিনি প্রতি হাটে এখান থেকে ১৫ থেকে ২০টি  নৌকা কিনে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। ২০ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করে আসছেন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তিনি প্রতি বছর রামসিদি থেকে নৌকা কিনে অন্যত্র বিক্রি করেন। নসিমন-করিমনে করে নৌকাগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি নৌকায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে।

এ অঞ্চলে নৌকার হাট বিষয়ে রামসিদি হাটের ইজারাদার হরেকৃঞ্চ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, আগে এ হাটে ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা কেনাবেচা হতো। খাল-বিলে পানি কমে যাওয়ায় এবং দূর থেকে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আগের মতো আসতে না পারায় নৌকার চাহিদা কমে গেছে। তিনি জানান, ব্যাপারিদের কাছ থেকে নৌকা প্রতি ৩০ টাকা ও খুচরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩৫ টাকা করে নেওয়া হয়। এর থেকে কিছু টাকা স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা হয়ে থাকে।

তুলারামপুর হাটের ইজারাদার বাবুল মোল্যা জাগো নিউজকে জানান, এখানে মনিরামপুর কেশবপুর থেকে ব্যবসায়িরা নৌকা কিনে নিয়ে যান।

হাফিজুল নিলু/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।