মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ড্রাইভিং শিখলেন চিকিৎসক!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ২৫ জুন ২০১৯

আব্দুল মোতালেব। গত শনিবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে যান। শ্বাসকষ্ট অতিরিক্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে উপজেলা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তার স্বজনরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স চালকের আসনে বসেন ডা. শহিদুর রহমান। অ্যাম্বুলেন্সের চালক থাকা সত্ত্বেও ওই মুমূর্ষু রোগী ও রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনকে ঝুঁকির মুখে রেখেই ড্রাইভিং শিখতে নিজেই গাড়ি চালান ওই চিকিৎসক। পরে অনিয়ন্ত্রিত ও অদক্ষ গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে না নিয়ে পটিয়ায় নেমে যান তার স্বজনরা।

রোগীর মেয়ে রেহেনা বেগম বলেন, বাবার শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার কারণে রোববার দুপুর ২টায় আলীকদম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে রওনা দিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আলীকদম থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুর রহমান নিজেই। যাওয়ার পথে একাধিকবার গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও তিনি পাশের সিটে বসে থাকা ড্রাইভারকে চালাতে দেননি এবং আলীকদম থেকে পটিয়ার শান্তির হাট পর্যন্ত পুরোটা পথ তিনি নিজেই গাড়ি চালান। পরে প্রায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা শান্তির হাট পৌঁছাই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডাক্তারের গাড়ি চালানো দেখে আর বাবার শরীরের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দ্রুত শান্তিরহাটে পরিচিত এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হই।

রোগীর আরেক স্বজন মো. পারভেজ বলেন, রোগীকে নিয়ে ডা. শহিদুর রহমান অ্যাম্বুলেন্স চালানো অবস্থায় বার বার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এছাড়াও গাড়ি চালানোর সময় খানাখন্দ ও স্পিডব্রেকার কোনো কিছুই মানেননি তিনি। বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ায় বারবার গাড়ি চালককে চালাতে দেয়ার অনুরোধ করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চুপ থাকার নির্দেশ দেন ডা. শহিদুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারের গাড়ি চালানোর এতই ইচ্ছে থাকলে তিনি নিজে কিনে বা ভাড়া করে চালাবেন। কিন্তু একজন মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর চেয়ে তার গাড়ি চালানো মোটেই কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাজ নয়।

অভিযুক্ত আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. শহিদুর রহমান বলেন, অ্যাম্বুলেন্স আমি চালাব, নাকি আর কেউ চালাবে সেটি আমি বুঝবো। আমার ইচ্ছে হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছি।

এরপর তিনি ফোন কল কেটে দেন। অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংশৈ প্রু বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। বিষয়টি শুনে সাবধান করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে আমি ব্যবস্থা নিব।

সৈকত দাশ/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।