দাঁড়িয়ে থেকে আ.লীগ নেতার মেয়ের বিয়ে দিলেন মেয়র
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মেয়ের বিয়ে দিলেন রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর।
শুক্রবার পৌর সদরের নিজ বাড়িতে প্রায় এক হাজার লোকের উপস্থিতিতে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান এই আওয়ামী লীগ নেতা। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মজিদ। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সেদিন ঢাকা থেকে এলাকায় আসেন মেয়র। কাউন্সিলর ও নেতাকর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, চারদিকে করোনা প্রতিরোধে প্রচারণা শুরু হলেও কাঁকনহাটে এমন প্রচারণা শুরু হয়নি। শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিয়ে মেয়র কিছু কথা বলেছেন মাত্র। এরপর আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ের বিয়েতে দলবল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়োজনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীরাও অংশ নিতে পারেন। এতে এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। বিষয়টি জেনে অনুষ্ঠান বন্ধের উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ। তবে মেয়রের এমন কাণ্ডে ক্ষুব্ধ উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীরের বড় মেয়ে সায়মা খাতুন সুমির সঙ্গে জেলার তানোরের রিশিকুল ইউনিয়নের প্রশাদপাড়া এলাকার জয়েন উদ্দিনের সরকারের ছেলে মিজানুর রহমানের বিয়ে হয়।
আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, সরকারি দফতরের কর্মকর্তা ওই বিয়েতে অতিথি ছিলেন। গরু জবাই করে প্রায় দুই হাজার লোকের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মাঝপথে উপজেলা প্রশাসন টের পাওয়া আয়োজন সীমিত হয়। তারপরও সেখানে অংশ নেন প্রায় হাজার খানেক অতিথি। নির্বিঘ্নে শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।
শনিবার বরের বাড়ি তানোরের ছিল বৌভাতের আয়োজন। সেখানেও বিপুল লোকের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল। তবে পুলিশের চাপে সেই আয়োজনও সীমিত করে বরপক্ষ।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীর। তিনি দাবি করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে দুই পক্ষের সম্মতি বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে অতিথিদের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সব আয়োজনও সম্পন্ন হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সব আয়োজন নিষিদ্ধ হওয়ার খবর পাই। কিন্তু আমার আর কিছুই করার ছিল না।
আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবীরের বাড়ি কাঁকনহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার পৌর কাউন্সিলর সাদেকুল ইসলাম সেলিমও উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝেই এই আয়োজন করা হয়েছিল। খাবার পরিবেশন তদারকি করেছি। হাজার খানেক লোকের খাবার পরিবেশন করা হয়। এই আয়োজনে মেয়রসহ গণ্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এই আয়োজনের কথা জানতেন না পুলিশের পরিদর্শক ও কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শিশির কুমার। তিনি বলেন, আগে থেকে এই আয়োজনের বিষয়টি জানতাম না। সব আয়োজন সম্পন্ন হওয়ায় বিয়ে বন্ধ করতে পারিনি।
জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম সরকার বলেন, শুক্রবার দুপুরে বিয়ের আয়োজনের খবর পাই। কিন্তু ওই সময় বিয়ে বন্ধের পরিস্থিতি ছিল না। তবে আয়োজন সীমিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
জেনেও পুলিশ এই আয়োজন বন্ধের ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কাঁকনহাটের ওই অনুষ্ঠানের খবর আমি জানতাম না। খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করতাম।
তিনি বলেন, সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে আমরা সবসময় এমন আয়োজন না করতে নিরুৎসাহিত করছি। শনিবার তানোরেও এমন কয়েকটি অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। গত ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৩০৮ জন প্রবাসী রাজশাহী ফিরেছেন। তাদের আমরা নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এরপরও মানুষ নির্দেশনা না মানলে সেটি দুঃখজনক।
জেনেশুনে তিনি ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন পৌর মেয়র আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। ওই দিন সকালে এলাকায় আসি। জুমার নামাজ শেষে তিনি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন । তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বেশি সময় অবস্থান করেননি।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এমন আয়োজন ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন মেয়র। একই সঙ্গে আগামী দু-একদিনের মধ্যে পৌর এলাকায় করোনাভাইরাস সচেতনতায় কার্যক্রম শুরুর কথা জানান তিনি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমকেএইচ