কক্সবাজারে সব ফার্মেসিতে ওষুধ সংকট
করোনা প্রতিরোধে প্রধান উপকরণ হিসেবে বিবেচ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও গ্লাভস পাওয়া যাচ্ছে না কক্সবাজারে। একই সঙ্গে সংকট দেখা দিয়েছে জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ ও সার্জিকাল মাস্কেরও।
অধিকাংশ ফার্মেসিতে মিলছে না এসব রোগের ওষুধ। কোথাও কোথাও পাওয়া গেলেও দাম চড়া। এসব ওষুধের সঙ্গে সংকট পড়েছে ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ওষুধেরও।
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এসব ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কক্সবাজারের দায়িত্বশীলরা। আর সংকটের বিষয়টি জানেনই না সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কক্সবাজারের দায়িত্বশীলগণ।
বুধবার শহরের ওষুধ মার্কেট বলে পরিচিত পুরাতন পান বাজার রোড়, হাসপাতাল সড়ক, বার্মিজস্কুল রোড়, বাজারঘাটা, ও বনবিভাগের সামনের বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার-হেক্সিসল-গ্লাভস ও সার্জিক্যাল মাস্ক মেলেনি। বেশিরভাগ ফার্মেসিতেই নেই বেক্সিমকো গ্রুপের নাপা-৫০০, নাপা এক্সট্যান্ড, নাপা এক্সট্রা এবং স্কয়ারের ফেক্সো-১২০, সিভিট-২৫০ এবং জিমেক্স-৫০০। এছাড়া গেল এক সপ্তাহ ধরে শহরের ফার্মেসিতে নেই বর্তমান বিশ্বে করোনার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত ইনসেপ্টা গ্রুপের রেকোনিল-২০০ এমজি ও ডেল্টা গ্রুপের রিওমাফলাক্স।
কক্সবাজার জেলা ফার্মেসি মালিক সমিতির সদস্য রুবাইছুর রহমানের মতে, গেল এক সপ্তাহ ধরেই শহরের বেশিরভাগ ফার্মেসিতে জ্বর, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ নেই। আমরা বেক্সিমকো ও স্কয়ারের কক্সবাজারের বিক্রয় প্রতিনিধিকে চাহিদা বিবেচনা করে ওষুধ বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা স্বাভাবিক সাপ্লাই-ই দিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে দরকার সার্জিকাল মাস্ক ও গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সিসল যা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মার্কেট আউট।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন দোকানি জানান, কোম্পানিও যেমন সাপ্লাই দিচ্ছে না পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী বেশি করে মজুত করে রেখেছেন। আবার গ্লাভস কিছু দোকানে থাকলেও ২শ টাকার বক্স এখন ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা করে চাচ্ছে। আর হেক্সিসল তো কোথাও পাওয়াই যাচ্ছে না। অথচ এগুলোই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর নতুন করে সংকটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ। এসব ওষুধও চাহিদার অনুপাতে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই কয়েকগুণ বেশি দামে এসব ওষুধ বিক্রি করছেন।
কক্সবাজার জেলা ফার্মেসি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ওষুধ সংকটের সবচেয়ে বড় কারণ হলো লোকজন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওষুধ নিয়ে ঘরে মজুদ করেছে। যার একপাতা নাপা লাগবে, তিনি নিয়ে গেছেন এক বক্স। একারণে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমরা ফার্মেসি মালিকদের কারও কাছে অতিরিক্ত ওষুধ বিক্রি করতে বারণ করেছি।
আর স্কয়ার গ্রুপের কক্সবাজার বিক্রয় কর্মী মোজাম্মেল হক হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ফেক্সো-১২০, সিভিট-২৫০, জিমেক্স-৫০০’র চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেশি। তার উপরে আমাদের মেশিনের একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম থাকায় সারাদেশেই এসব ওষুধ সাপ্লাই আপাতত বন্ধ রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই আশা করি সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বেক্সিমকো ফার্মার কক্সবাজার বিক্রয়কর্মী কৃষ্ণ বর্মন বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মার্কেটে নাপা-৫০০, নাপা এক্সট্র্যান্ড ও নাপা এক্সট্রার সংকট রয়েছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে সাপ্লাই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করেন তিনি।
অসমর্থিত এক সূত্র মতে, সংকটে পড়া ওষুধগুলোর একই গ্রুপের তৈরি অখ্যাত কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করছেন। এসব ওষুধ খুঁজতে আসা সেবাপ্রার্থীদের তাদের ওষুধগুলো তুলে দিতে পারবেন বলে ফার্মেসি সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন সেসব বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু সচেতন অনেকে প্রতিদ্ধ ও গুণগত মানের কোম্পানির ওষুধ না হলে কিনেন না বলে দাবি সূত্রটির।
কক্সবাজার ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রিয়াংকা দাশ গুপ্ত বলেন, বাজারে ওষুধের সংকটের কথা আমার জানা নেই। আমি আজই খোঁজ নেব।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ওষুধ সংকট হওয়ার কথা নয়। এরপরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সায়ীদ আলমগীর/এমএএস/বিএ