মির্জাপুরে ইউএনও ও এসিল্যান্ড ছাড়া কেউ নেই
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই অফিসে তালা লাগিয়ে চলে গেছেন বাড়িতে।
এদিকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসেছেন। তারা সকাল বিকেলে হাট-বাজার ও গ্রামের চায়ের দোকানে জমায়েত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। এতে গ্রামের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ উপজেলায় রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সভা-সমাবেশ, সাপ্তাহিক হাট, গণজমায়েত, কোচিং সেন্টার, ক্লাব, বিনোদন পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করে একাধিকবার মাইকিং করেন। এছাড়া এ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রধান করে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন।
জনগণের এ দুর্যোগময় মুহূর্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে ছাড়া আর কাউকে অফিস ও এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার বিশেষ কয়েকটি এলাকা ছাড়া করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও প্রশাসনের তদারকি না থাকায় গ্রামের মানুষ সকাল-বিকেলে জমায়েত হয়ে আড্ডা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে গ্রামের মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, মির্জাপুর পৌরসভায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান, মহেড়া ইউনিয়নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, জামুর্কী ইউনিয়নে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন, ফতেপুর ইউনিয়নে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, বানাইল ইউনিয়নে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাব্বির আহমেদ মুরাদ, আনাইতারা ইউনিয়নে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, উয়ার্শী ইউনিয়নে উপ-সহকারী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বাহার উদ্দিন, ভাওড়া ইউনিয়নে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, ভাদগ্রাম ইউনিয়নে সাব-রেজিস্ট্রার মো. মোজহারুল ইসলাম, বহুরিয়া ইউনিয়নে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার ফরহাদ হোসেন ফাহাদ, গোড়াই ইউনিয়নে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. সাইফ উদ্দিন আহমেদ, আজগানা ইউনিয়নে আমার বাড়ি আমার খামার সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান, বাঁশতৈল ইউনিয়নে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, তরফপুর ইউনিয়নে উপজেলা সমবায় অফিসার আমিনা পারভীন ও লতিফপুর ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন।
বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারা নিজ নিজ অফিসেও আসছেন না এবং দায়িত্বরত এলাকায় মানুষ কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা থাকবে তার প্রচারণাও চালাচ্ছেন না। সরকারি কর্মকর্তারা জরুরি প্রয়োজনে মির্জাপুরে জনগণের পাশে থাকার পরিবর্তে নিজের ঘরকেই তারা বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলায় সুনশান নিরবতা। প্রতিটি সরকারি অফিসের সামনে ঝুলছে তালা। নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেনকে ছাড়া কেউ নেই। অথচ জনগণের এ সঙ্কটের সময় মুহূর্তে সবাইকে উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তার জন্য নির্দেশনা ছিল।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, ভাদগ্রাম ইউনিয়নে সাব-রেজিস্ট্রার মো. মোজহারুল ইসলাম, বহুরিয়া ইউনিয়নে উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার ফরহাদ হোসেন ফাহাদ, গোড়াই ইউনিয়নে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার ডা. সাইফ উদ্দিন আহমেদ, আজগানা ইউনিয়নে আমার বাড়ি আমার খামার সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান, বাঁশতৈল ইউনিয়নে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, তরফপুর ইউনিয়নে উপজেলা সমবায় অফিসার আমিনা পারভীন ও লতিফপুর ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নিলুফা ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, রোববার অফিসে আসেননি।
লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার নিলুফা ইয়াসমিন মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে জানিয়েছেন তিনি গাজীপুরে অবস্থান করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক জানান, সরকারি নির্দেশনায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা স্টেশনে থাকার কথা থাকলেও কয়েকজন ছাড়া বাকিরা অনুপস্থিত রয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।
এস এম এরশাদ/এমএএস/এমএস