এক সপ্তাহ ধরে না খেয়ে আছে ওরাও
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে সিলেট নগরের গোয়াইটুলা এলাকার হজরত চাষনি পীর (র.)-এর মাজারে থাকা দুই শতাধিক বানর গত কয়েকদিন দিন ধরে অভুক্ত। বিষয়টি নজরে এলে এদেরকে কলা-রুটি খাওয়ান পরিবেশবাদীরা। মানুষের মমতায় অভুক্ত বানরগুলো কলা, রুটি আর টমেটো পেয়ে পেটভরে খেয়ে মানুষের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলা-রুটি নিয়ে চাষনি পীরের টিলায় যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির ও
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ।
এ সময় পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদও বানরগুলোকে কলা-রুটি খাওয়ান।
স্থানীয়রা জানায়, হজরত চাষনি পীর (র.)-এর মাজারে টিলার উপরে গাছগাছালিতে দুই শতাধিক বানরের বাস। এমনিতে স্বাভাবিক সময়ে মাজারে প্রতিদিন দর্শনার্থী-পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। এখানে ভক্তরা আসেন মাজার দর্শনে, বানর দেখতেও আসেন অনেক পর্যটক। কলা-বিস্কুট-রুটিসহ বানরদের জন্য নানা খাবার নিয়ে আসেন দর্শনার্থীরা। ফলে বানরের খাবারের কোনো অভাব হত না। কিন্তু হঠাৎ করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সরকার উদ্যোগ নিলে এ বানরগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনেকটা অভুক্ত অবস্থায় ছিল এখানকার বানরগুলো।
এক জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকানোর উদ্যোগে বিপাকে পড়ে এখানকার অসংখ্য জীব। বিপাকে পড়েছে মানুষও। বিশেষত নিম্নবিত্ত-দিনমজুর মানুষরা। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিত্তবানরা।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সারা দেশে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও সহায়তা করছেন অনেকে। কিন্তু এই বানরগুলোর ভাগ্যে জোটেনি কিছুই।
তবে বৃহস্পতিবার এগিয়ে এসেছেন কিছু পরিবেশ কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন ব্যক্তি। চাষনি পীরের মাজারের বানরদের খাবার বিতরণ করেন তারা। প্রাণিপ্রেমী বিভিন্ন মানুষের অর্থ-সহায়তায় বানরদের এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ।
জানা যায়, চাষনি টিলার পাশেই দলদলি চা-বাগান। এই বাগানেই ছিল বানরগুলোর আদিনিবাস। আশির দশকে চা-বাগানের একাংশের বন কেটে গড়ে ওঠে আবাসন। ১৯৮৪ সালের শুরুর দিকে সেখানকার বানরগুলো এসে মাজার এলাকায় বসত গড়ে। সেই থেকে ওরা এখানেই আছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই টিলার আশপাশের বন ও টিলা ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে আবাসন। ফলে আবার সঙ্কটে পড়ে বানরগুলো। তবে গত এক সপ্তাহের মতো সঙ্কটজনক অবস্থা আগে কখনও তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, এই টিলা তো বানরেরই আবাসস্থল ছিল। মানুষজন ওই দিকে গিয়ে বানরের আবাস ও খাদ্যসংগ্রহের গাছগুলো ধ্বংস করেছে। ফলে এরা খাবার ও আবাস সঙ্কটে পড়েছে। পর্যটকদের দেয়া খাবারই এদের একমাত্র ভরসা ছিল। এখন পর্যটক না থাকায় এরা চরম বিপাকে পড়েছে। প্রায় অভুক্ত অবস্থায় আছে। আজকে আমরা বানরগুলোকে কলা- রুটি দিয়েছি। সব মানুষকে নিজেদের আশপাশের প্রাণিদের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এই সময়ে প্রাণিগুলোও সঙ্কটে রয়েছে।
ছামির মাহমুদ/এএম/এসআর