‘ভোট আইলে হাত পাও ধ‌রে, এখন খবর নাই’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ০৩ এপ্রিল ২০২০

‘আমাদের দেশে নাকি খাবার সংকট নাই, কই আমাদের ঘরেতো এখনও খাবার আইলো না। মুখ দেখি দেখি খাবার দিলে আমরা গরিবরা বাঁচতাম কেমনে? আমরা কা‌রও কাছ থে‌কে সাহায্য পাইনি, কেউ খোঁজও নেয়‌নি আমা‌দের। ভোট আইলে হাত পাও ধ‌রে, এখন তা‌দের খবর নাই।’

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় খাবার না পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ধোপাখালী এলাকার এক শ্রমজীবী নারী।

করোনভাইরাসে অসহায়, দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী প্রদানে সরকারের নির্দেশ থাকলেও সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ১নং ওয়া‌র্ডের উত্তর ষোলঘ‌রে (ধোপাখা‌লী) নিম্ন আ‌য়ের মানু‌ষের ম‌ধ্যে কোনো রকমের খাদ্য সহায়তা এখনও দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। চলমান ক‌রোনা প‌রি‌স্থি‌তি‌তে বাইরে কোনো কাজ না থাকায় ও বিভিন্ন ওয়ার্কসপ এবং দোকানপাট বন্ধ থাকায় এ এলাকার বেশ কিছু প‌রিবার ক‌ষ্টে জীবনযাপন কর‌ছে।

তাদের দাবি, ভোট চাওয়ার সময় যে কথাগুলো দিয়েছিলেন মেয়র সেগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেন।

সরেজমিনে, সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ধোপাখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহ‌রের অন্যান্য এলাকার চে‌য়ে অনুন্নত এই ধোপাখালী। য‌দিও এলাকা‌টি ব‌র্ধিত পৌর এলাকায় নয়, পুরাতন পৌর এলাকায় অব‌স্থিত। সরু সড়‌কের মহল্লায় প্রায় শতা‌ধি‌কের ওপ‌রে প‌রিবা‌রের বসবাস। এর ম‌ধ্যে অনেক নিম্ন আ‌য়ের প‌রিবা‌রেরও বসবাস। যারা প্রতি‌দি‌নে রোজগা‌ জীবন চালান। ক‌রোনাভাইরা‌সে অন্যান্য এলাকার মত এই মহল্লার মান‌ুষও বর্তমানে কর্মহীন। সরকা‌রি নি‌র্দেশনার কার‌ণে ঘর থে‌কে বের হ‌তে পার‌ছেন না তারা। অভাব অনট‌নে দিন কাট‌ছে তা‌দের। জেলা প্রশাসন, পৌরসভাসহ কেউ তা‌দের খাদ্য সহায়তা দেয়নি।

রিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সরকারের ছুটি মেলা দিন ওইছে কিন্তু এখনও ঘরে কেউ এক কেজি চালও নিয়ে আসে নাই। আমার বাচ্চাটা প্রতিবন্ধী তারেও ঠিকমতো খাওন দিতে পারি না। রিকশা নিয়া বার হইলে পুলিশের কথা শুনা লাগে। টিভিতে শুনছি দেশে খাদ্যের অভাব নাই কিন্তু কই আমাদের ঘরে তো খাওন নাই। ভোটের সময় ঠিকই মুখে ফুল ফোটে, কামের সময় দেখা নাই।’

sunamgonj02

শ্রমজীবী লোকমান মিয়া বলেন, ‘আমরা খাবার পাই নাই এখনও, তবে শুনছি আশপাশে কয়েকটি এলাকায় দিয়েছে। তাহলে আমরা কী দোষ করলাম খাবার নাই কেন আমাদের। আমাদের কেন খাবার থেকে বঞ্চিত করা হইতেছে। ’

স্থানীয় বা‌সিন্দা মমতা ইসলাম মম ব‌লেন, অসহায় একটি পরিবারেও এখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি কোনো দফতর থেকে কোনো প্রকার খাদ্য সহায়তা। নিম্ন আ‌য়ের মানুষরা বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যান, রিকশা, অটোচালক ও দিনমজুর পরিবারগুলো হয়ে গেছে কর্মহীন। কর্মহীন হয়ে গেছে অন্যের বাসায় খেটে খাওয়া কাজের বুয়ারাও। এদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব কার?

ওই এলাকার বা‌সিন্দা সাংবা‌দিক মাহমুদুর রহমান তা‌রেক ব‌লেন, স্থানীয় নিম্ন আ‌য়ের মানুষরা আমা‌কে জা‌নি‌য়েছেন, তারা খাদ্য সহায়তা পান নি। এলাকার জনপ্র‌তি‌নি‌ধিরা তা‌দের খোঁজখবর নি‌চ্ছেন না। বিষয়‌টিতে পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাস‌নের নজর দেয়া উচিত।

এ ব্যাপ‌ারে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র না‌দের বখ‌তের মোবাইলে একাধিকবার যোগা‌যোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বাদ পড়াদের নতুন করে তালিকা করা হচ্ছে। সরকার থেকেও বরাদ্দ এসেছে। আমরা খুব শিগগিরই খাদ্য সামগ্রী সবার মধ্যে পৌঁছে দিব।

মোসাইদ রাহাত/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।