বগুড়ায় বাসস্ট্যান্ডে ফেলে যাওয়া ব্যক্তির করোনা পজিটিভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০২০
ফাইল ছবি

জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা থেকে রংপুরে যাওয়ার পথে বগুড়ায় বাসস্ট্যান্ডে ফেলে যাওয়া সেই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির কথা অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়াও তিনদিন আগে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে মারা যাওয়া ১৩ বছরের শিশুর শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এটিএম নুরুজ্জামান বলেন, আইসোলেশনে ভর্তি থাকা রংপুরের ওই ব্যক্তির দেহে করোনার উপস্থিতি মিলেছে। ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে বিষয়টি তাদের নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোববার পর্যন্ত আইসোলেশনে করোনার উপসর্গ নিয়ে দুই নারীসহ আরও তিনজন ভর্তি হয়েছেন। তাদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এ ছাড়াও আগে থেকে আইসোলেশনে ভর্তি চারজনের মধ্যে একজনের দেহে করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এর বাইরে তিনদিন আগে আইসোলেশনে মারা যাওয়া গাবতলী উপজেলার ১৩ বছরের শিশুটি করোনায় আক্রান্ত ছিল না বলে আইইডিসিআর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (২৯ মার্চ) ভোররাতে বগুড়ার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডে ট্রাক থেকে ওই ব্যক্তিকে মহাস্থান বাসস্ট্যান্ডের কাছে ফেলে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বর্তমানে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। তার নমুনা পরীক্ষার জন্য গত বুধবার (১ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি আছে বলে বৃহস্পতিবার ( ২ এপ্রিল) সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে জানানো হয়। পরে আইইডিসিআর থেকে রিভিউ রিপোর্টে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধানসহ পাঁচজন চিকিৎসক, আটজন নার্সসহ মোট ১৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির কাছ থেকে সবাইকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির বলেন, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় মহাস্থান থেকে যেসব ব্যক্তি তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে বগুড়ায় ছেলের বাড়িতে বেড়াতে এসে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন আকবর আলী (৭০) নামে এক ব্যক্তি। শনিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় মারা যান এই বৃদ্ধ।

আকবর আলীর বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগ তার শরীরের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকবর আলীর ছেলে পুরান বগুড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। ১০ দিন আগে গাইবান্ধা থেকে ওই ব্যক্তি ছেলের বাসায় বেড়াতে আসেন। কয়েক দিন ধরে তিনি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় গত শুক্রবার (৩ এপ্রিল) তিনি পুরান বগুড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজও আদায় করেন। শনিবার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বিকেলে ছেলের বাড়িতেই তিনি মারা যান।

বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ ছিল। সন্দেহ থাকায় শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মাধ্যমে আইইডিসিআর কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। যে বাসায় ওই ব্যক্তি মারা গেছেন সেই বাসার সদস্য ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেবে স্থানীয় প্রশাসন।

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ যেভাবে বলবে প্রশাসন থেকে লকডাউন ও দাফনসহ সেভাবেই সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লিমন বাসার/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।