স্বেচ্ছায় লকডাউনে চলে গেলেন সিলেটের মানুষ
সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। নগরের অধিকাংশ এলাকার মানুষ স্বেচ্ছায় লকডাউনে চলে গেছেন।
দুদিন আগেও মানুষদের ঘরে আটকে রাখতে যখন সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। অথচ এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কে স্বেচ্ছায় ‘লকডাউনে’ চলে গেছেন এই মানুষগুলো। প্রাণচঞ্চল সিলেট মহানগরে এখন বিরাজ করছে অন্যরকম নীরবতা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে তারা পাড়ার ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশ ও ভেতরে অপ্রয়োজনে কারও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন পাড়ায় ঢোকার প্রবেশপথ।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের আম্বরখানা মনিপুরি পাড়ার সামনের রাস্তার প্রবেশমুখে লেখা রয়েছে, ‘বহিরাগতরা পাড়ায় প্রবেশ নিষেধ, স্টে হোম, স্টে সেইফ, লকডাউন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলুন।’
একইভাবে নগরের লামাবাজারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বিলপার এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা দুটি প্রবেশ মুখে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে স্বেচ্ছায় লকডাউনে যান। ‘বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ’ কাগজে লিখে গেটে লাগানো হয়েছে সতর্কবার্তা। সঙ্গে রয়েছে একটি সতর্কীকরণ পোস্টার।
একই চিত্র দেখা যায় নগরের লামামাবাজার এলাকায় অবস্থিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মণিপুরি পাড়ায়। এ পাড়াতেও তাদের এলাকায় প্রবেশের দুটি ফটকে টাঙানো হয়েছে হাতে লেখা সাইনবোর্ড এবং বন্ধ করে রাখা হয়েছে প্রবেশপথ। সেখানে গেটের এক পাশে লাল কালিতে লেখা রয়েছে, ‘বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ, ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, লকডাউন।’ গেটের অন্য পাশে লেখা, ‘প্রবেশ নিষেধ, লকডাউন।’
মণিপুরি পাড়ার বাসিন্দারা জানান, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে এই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়; যদি না আমরা নিজ থেকে সচেতন হই। সরকার থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে প্রতিদিন সচেতন করার চেষ্টা করছে। তাদের এই সচেতনতা কেউ মানছেন, কেউ আবার মানছেন না। তাই নিজের সুরক্ষায় ও পাড়ার বাসিন্দাদের করোনার হাত থেকে বাঁচাতে আমরা সচেতনতামূলক এ উদ্যোগ নিয়েছি।
এদিকে কোনো কোনো এলাকায় বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী গেট নির্মাণ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পাড়া বা মহল্লার প্রবেশপথ। সেখানেও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘লকডাউন’ নামের সতর্কবার্তা। তারপরও যদি জরুরি প্রয়োজনে কেউ আসেন তাকে পাড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়, সাবান পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মাধ্যমে হাতকে ভালো করে পরিষ্কার করে ঢুকবেন।
লালাদিঘী পাড়ের বিমল সিংহ বলেন, প্রতিদিন কারণে-অকারণে এলাকায় অনেক বহিরাগত আসেন। তাদের যাতায়াতের কারণে এখানে করোনার সংক্রমণ হতে পারে। ঝুঁকি এড়াতে এলাকাবাসী এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
একইভাবে পাড়ার লোকজনের বাইরে বের হওয়ায় ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আম্বরখানা এলাকার মণিপুরি পাড়ায়। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ পাড়ার বাইরে যেতে বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বহিরাগতরা পাড়ার ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না। তবু কাউকে যদি পাড়া থেকে বের হতে হয়; তবে আবার পাড়ায় প্রবেশের সময় রাস্তায় রাখা পানি ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। এখানে ২৪ ঘণ্টাই পাড়ায় প্রবেশের মূল ফটকটি বন্ধ রাখা হয় এবং ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে সতর্কবার্তা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নগরের বেশিরভাগ মহল্লার প্রবেশপথে বহিরাগতদের প্রবেশ ও ভেতরে অপ্রয়োজনে কারও বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সিলেট নগরের লামাবাজার, লালদিঘীরপার ও আম্বরখানা মণিপুরি পাড়া ছাড়াও শিবগঞ্জ, সুবিদবাজারের লন্ডনি রোড, বড়বাজার, করেরপাড়া, নয়াসড়কের মিশন গলি, বাগবাড়ি, সুবিদবাজার কলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় লকডাউন করেছেন।
ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস