বন্ধ হয়নি চা বাগান, করোনার ঝুঁকিতে চা শ্রমিকরা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার জন্য যখন সারাদেশ কার্যত লকডাউন সেখানে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক। একসঙ্গে কাজ করা আর লাইনে দাঁড়িয়ে চা পাতা জমা দেয়ার কারণে সংক্রমের ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব চা শ্রমিকসহ তাদের পরিবারের প্রায় ৬ লাখ সদস্য। দেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে ৯২টি মৌলভীবাজারে।
এদিকে চা বাগান বন্ধ না হওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ- শ্রমিক ইউনিয়ন মালিকপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে ছলচাতুরি করছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার একটি চা বাগানের পাশেই গত ৪ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার দোকানে চা শ্রমিকদের আনাগোনা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অরক্ষিত চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের দাবি- চা শ্রমিক নেতাদের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতাই চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নে প্রতিদিন ঢাকায় কর্মরত লোকজন আসছেন। চা বাগানে ঢাকাফেরত একজনের জ্বর-সর্দি দেখা দিলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে করে বিভিন্ন চা বাগানে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ৪ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের আকুয়া গ্রামের এক টং দোকানদার মারা যান। পরে তার নমুনায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় মৌলভীবাজার জেলায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই এলাকার পাশেই সনাতলা চা বাগান।
পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ১৩ বছর বয়সী এক শিশু করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায়। মৃত শিশু ও তার মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষাগারে। রিপোর্ট আসলে তারা করোনায় আক্রান্ত কি-না বুঝা যাবে।
খেজুরী চা বাগানের রসরাজ বাউরি বলেন, একজন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলে তা ছড়িয়ে পড়বে হাজারো শ্রমিকের মাঝে। এজন্য মজুরিসহ সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও সরকারি বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
স্বাস্থ্য কর্মী মহেশ রজত বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের নাম-তালিকা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানাচ্ছি। তিনি চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন বলেন, এমনিতেই চা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার অবস্থা খুবই নাজুক। অন্যদিকে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের পরিচ্ছন্ন কোনো বক্তব্য নেই। আর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ইতিহাস হলো আপসকামিতা। তারা সব সময় মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত থাকে।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস বলেন, চা জীবন রক্ষাকারী কোনো পণ্য না। এখন চা পাতার সিজন নেই। তাই কোনো ঝুঁকি ছাড়াই মালিকপক্ষ চা বাগান সবেতনে ছুটি দিতে পারে। কিন্তু সব কিছুর বড় অন্তরায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তারা সবসময় মালিকপক্ষের দালালি করে থাকে। যার কারণে গার্মেন্টেসের মতো বড় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও চা বাগান আজ পযন্ত বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, রফতানিমুখী সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বন্ধ করা হয়নি চা বাগানগুলো। দেশের সবকটি চা বাগানে প্রায় দেড় লক্ষাধিক চা শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছে। চা বাগানে গাদাগাদি করে বসবাস করলেও বাগান মালিক বা সরকার বাগান বন্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ
করেনি।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাম ভোজন কৈরী বলেন, আমরা ছুটির জন্য আন্দোলন করছি। যারা বলছে আঁতাত করছি তারা আমাদের কাছে এসে বলুক যে,, আমরা এই ভুল করেছি। ছুটি আদায় করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে আন্দোলন করতে হবে, এখন বিভেদের সময় নয়।
রিপন দে/আরএআর/জেআইএম