রাঙ্গামাটিতে আক্রান্ত নার্স হাসপাতালে ছিলেন গতকালও
দেশের ৬৪ তম জেলা হিসেবে রাঙ্গামাটিতে গতকাল এক শিশুসহ চারজন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন রাঙ্গামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত নার্সও রয়েছেন। যিনি গতকালও কর্মরত ছিলেন হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ গাইনি ওয়ার্ডে।
এ সংবাদ আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো হাসপাতালেই। ইতোমধ্যেই ওই নার্সের সংস্পর্শে আসা তিন চিকিৎসকসহ ১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠনো হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে হাসপাতালকে জীবানুমুক্ত করার। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত ও সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার জন্য আজ চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল রাঙ্গামাটি থেকে বেশ কিছু নমুনা চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়। সাতদিন পর গতকাল সকালে আমাদের জানানো হয় এর মধ্যে চারজনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। আক্রান্তদের একজন আমাদের হাসপাতালেরই নার্স। তিনি গতকালও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ওই নার্সের সংস্পর্শে আসা তিন চিকিৎসকসহ ১৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠনো হয়েছে।’
হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক নীহার রঞ্জন নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালে কর্মরতরা মাস্ক, পিপিই পরেই কাজ করছেন। তবে এরপরেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। আমাদের যে নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি এর আগে আউটডোরে কর্মরত থাকলেও গতকালই গাইনি বিভাগে কাজ শুরু করেছিলেন। জেনেছি তিনি তিনজন পেসেন্টকে সেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া আরও তিন চিকিৎসা তার সংস্পর্শে এসেছেন। ২৯ এপ্রিল তার নমুনা নেয়া হয়। এক সপ্তাহ পরে রিপোর্ট, স্বভাবতই ঝুঁকিটা থেকেই যায়। এ কারণে হাসপাতালের রোগী, চিকিৎসক ও কর্মরতদের মধ্যে ১৫ জনকে আলাদা করা হয়েছে।’
পিপিই-মাস্ক পরেই কাজ করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তারপরও আক্রান্ত হচ্ছেন
৯ মাসের শিশুর শরীরেও করোনার বিষ
রাঙ্গামাটিতে যে চারজন শনাক্ত হয়েছে তাদের একজন মাত্র নয় মাসের শিশু। শিশুটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার এক ইমামের সন্তান। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটি তার নিকটজনদের কারও কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই ইমামের কর্মস্থলও রয়েছে লকডাউনের আওতায়।
এদিক রাঙ্গামাটি শহরের দেবাশিষ নগর এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. মোস্তফা কামাল জানান, এ শিক্ষার্থী কাপ্তাই সুইডিস পলেটেকনিক কলেজের অধ্যায়নরত। গত মার্চ মাসের শেষ দিকে তিনি বাড়িতে আসেন।
জানা গেছে, হাসপাতাল এলাকার এ দিনমজুর কাজ করেন নগরে কলেজ গেটসহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। নমুনা সংগ্রহের প্রায় সাতদিন পর তার করোনা শনাক্ত হলেও এর মাঝেই তিনি মিশেছেন অনেকের সাথেই। শিশু, হাসপাতালের নার্স, কলেজছাত্র ও দিনমজুরের মতো বিভিন্ন পর্যায়ে করোনা শনাক্ত হওয়ায় পুরো শহরেই করোনা ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
পিপিই-মাস্ক পরেই কাজ করছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তারপরও আক্রান্ত হচ্ছেন
শহরের চার এলাকা লকডাউন
বুধবার দুপুরে নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরের চারটি এলাকা লকডাউন ঘোঘণা করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার বিকেল ৪টার মধ্যেই এ লকডাউন কার্যকর হয় বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ কে এম মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত এলাকা থেকে রোগী শনাক্ত হয়েছে সেই সংশ্লিষ্ট এলাকার অথাৎ রোগীর পার্শ্ববর্তী স্থানকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবাই এখনও সুস্থ আছেন। তাদের আবারও নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।'
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন করা এলাকাগুলো হলো- শহরের রিজার্ভবাজারের কিছু অংশ, দেবাশীষ নগরের কিছু অংশ ও হাসপাতালের মোল্লাপাড়া এলাকা।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি/জেডএ/পিআর