স্থলবন্দর চালুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কেন্দ্রের হুঁশিয়ারি
বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে অবিলম্বে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
এর আগে, দু’দিনের জন্য শুধুমাত্র রফতানি বাণিজ্য চালু হলেও করোনা সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে বনগাঁ ও পেট্রাপোলের কিছু শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়।
কেন্দ্রের দাবি- এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে আমদানি-রফতানি চালুর উদ্যোগ নেয়নি। রাজ্যের এই ভূমিকাতেই বেজায় চটেছে কেন্দ্র।
সীমান্ত বাণিজ্য শুরু করতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই পেট্রাপোলে স্থলবন্দরে দ্রুত আমদানি-রফতানি শুরু করতে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব।
মহামারি করোনাভাইরাসকালীন পরিস্থিতির আওতায় পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে কেন্দ্র নির্দেশনা জারি করেছে বলে মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা। চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অবিলম্বে পেট্রাপোল সীমান্তে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।
জানা গেছে, গত ২৪ এপ্রিল পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ও বন্দরে সীমিত আকারে কার্যক্রম চললেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে দু’দিন (৩০ এপ্রিল ও ২ মে) পণ্য রফতানি করলেও সেটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে লকডাউনের মধ্যেই পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রফতানির কাজ শুরু হয়। তবে রফতানি বন্ধ করার জন্য গত ৩ মে ভারতের বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়তের পেট্রাপোল সীমান্ত লাগোয়া জয়ন্তীপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাসহ এই স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
তাদের দাবি- সীমান্তের ওপারে অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় ওপার বাংলার শ্রমিকরা এপার বাংলার কাজে যুক্ত থাকলে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতেও দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে। তাই আমদানি-রফতানির কাজ শুরু হলে করোনা সংক্রমণ কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। ফলে এলাকাবাসীদের স্বার্থে বন্ধ রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য।
আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, বনগাঁ অঞ্চলের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে বিরোধিতা করে বনগাঁর পৌরসভার কালিতলা পার্কিং থেকে কোনো পণ্যবোঝাই ট্রাক ছাড়েনি। এসব ট্রাক সেন্ট্রাল পার্কিংয়ে থাকার কথা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কালিতলা পার্কিংয়ে রাখা হচ্ছে। তারা সাধারণ জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে দেয়। কালিতলা পার্কিংয়ে বর্তমানে এক হাজার ৯৮৩টি বিভিন্ন ধরনের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এসব ট্রাক থেকে বনগাঁ পৌরসভা প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকা ও ট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। ওখান থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংয়ে এসে পড়লে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন বনগাঁর একটি সিন্ডিকেট জোরপূর্বক পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পাকিংয়ে না পাঠিয়ে নিজেদের তৈরি করা কালিতলা পার্কিংয়ে ঢোকাতে বাধ্য করে। এ কারণে ভারতের এক একটি ট্রাক পেট্রাপোল পার্কিংয়ে আসতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নেয়। ট্রাকজটের কারণে অথবা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মাল নিচ্ছে না বা বেনাপোল বন্দরে জায়গা নেই এসব অজুহাতে তারা এ কাজটি করে আসছে। মাঝে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনারের হস্তক্ষেপে সরাসরি পণ্যবাহী ট্রাক কোনো বেসরকারি পার্কিংয়ে না থেকে সরাসরি পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংয়ে চলে আসতো এবং দ্রুত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হতো।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ম্যানেজার শুভজিত মন্ডল বলেন, ‘সরকারিভাবে পেট্রাপোল বন্দর চালু আছে। কিন্তু কিছু সাধারণ জনগণ করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বনগাঁয় আন্দোলন করায় পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খবর রাখছি, পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার কাজ হবে।’
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘ভারত থেকে দু’দিনে ১৫ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। নো-ম্যান্সল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান মেনেই লোড-আনলোড করা হয়েছে। ভারতে জনগণের আন্দোলনের জন্য রোববার (৩ মে) থেকে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। পেট্রাপোল বন্দর পণ্য দিলে বেনাপোল বন্দরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।’
বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন চৌধুরী জানান, বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসাররা কাজ করছেন। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস পরে ফাইল নিয়ে হাউসে প্রবেশ করছেন।
মো. জামাল হোসেন/এফআর/পিআর