একমাত্র সন্তানকে দূরে রেখে করোনাযুদ্ধে লড়ছেন চিকিৎসক দম্পতি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ১০ মে ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কঠিন দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবসেবার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চাঁদপুরের এক চিকিৎসক দম্পতি।

একমাত্র সন্তানকে দাদা-দাদির কাছে রেখে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় করোনা চিকিৎসায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এমন কঠিন সময়ে সহকর্মীদের অনেকেই যখন আত্মরক্ষায় নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন তখন মানবসেবার ব্রত নিয়ে করোনাবিরোধী সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছেন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল ও ডা. সাজেদা বেগম পলিন দম্পতি। তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ, একাগ্রতা, ধৈর্য ও সাহসিকতা অতুলনীয়।

করোনা সংক্রমের শুরুতেই আইইডিসিআরের করোনাবিষয়ক প্রশিক্ষণে জেলা থেকে শুধু এই দুজন চিকিৎসক অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরও কয়েক দফা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তারা। প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি, পদ্ধতির সঙ্গে আন্তরিকতা ও সাহসিকতার মিশেলে নিজেদের মেলে ধরেছেন জনকল্যাণে।

চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী বাছাই, নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা বিষয়ে যেসব চিকিৎসকের নাম সর্বোচ্চ ধাপে তাদের মধ্যেও শীর্ষে ডা. রুবেল-পলিন দম্পতি। নিরলসভাবে সেবা দিয়ে চলছেন মানবতার এই সেবকরা। চলমান করোনাযুদ্ধে সমরক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে চাঁদপুরে চিকিৎসকদের মধ্যে শীর্ষযোদ্ধা তারা। সেবা নিতে আসা মানুষ, শনাক্তকৃত রোগী, স্বজন, সহকর্মী ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক তো করোনাযুদ্ধের ‘জেনারেল’ পদে ভূষিত করেছেন ডা. সাজেদা বেগম পলিনকে। ওই পরিচালকের মতে, করোনাযুদ্ধে বিভাগীয় শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসক তথা করোনাযোদ্ধা ডা. পলিন।

ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের আরএমও হিসেবে কর্মরত। মেধাবী ও পরিশ্রমী এই চিকিৎসককে করোনাবিষয়ক ফোকাল পার্সন এবং মেডিকেল টিমের প্রধান মনোনীত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত যে শতভাগ সঠিক ও সময়োপযোগী ছিল কাজের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তার প্রমাণ রেখে চলেছেন তিনি।

অন্যদিকে তার স্ত্রী ডা. সাজেদা বেগম পলিন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। চিকিৎসাসেবা দানের ক্ষেত্রে স্বামীর সঙ্গে তার পার্থক্য দু’টো। প্রথমত তার আওতায় কোনো হাসপাতাল নেই। তাই চিকিৎসা পরামর্শ দিলেও ভর্তিকৃত রোগীর বিষয়ে তার কোনো কার্যক্রম নেই।

এই চিকিৎসক যুগলের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ফসল হিসেবে চাঁদপুর জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চাঁদপুর সদর উপজেলা ও সদর হাসপাতালে (সারা জেলার ৪৬ জনের মধ্যে ২৫ জন)। রোগী বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা, কাজের পরিধি, দায়িত্ব-কর্তব্য।

ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, করোনার ঝুঁকি জেনেও আমি সদর হাসপাতালে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করি। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র দেয়া, শনাক্ত রোগীদের হাসপাতাল অথবা বাসায় চিকিৎসাপত্র দেয়া, আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়তি নজর রাখাসহ মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্তের কাজ করি।

ডা. সাজেদা বেগম বলেন, চিকিৎসাসেবা দানের ক্ষেত্রে আমার কোনো হাসপাতাল নেই। তবে, করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি টিম পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করাসহ সন্দেহভাজন, আক্রান্ত, মৃতের বাসা-বাড়ি লকডাউন করার কাজটি করে যাচ্ছি প্রতিদিনই।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এই চিকিৎসক দম্পতি শহরে আলাদা প্রতিষ্ঠানে থেকেও করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা, নমুনা সংগ্রহ ও সচেতনতায় শুরু থেকে সক্রিয় রয়েছেন। ইতোমধ্যে ডা. সাজেদা বেগমকে স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক করোনাযুদ্ধের ‘জেনারেল’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।