মানুষের সেবাই আমার কাছে বড় ধর্ম
গত কয়েক মাসে গোটা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ ভাইরাস মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। দিন দিন জনমনেও শঙ্কা বাড়ছে।
সুন্দর এই পৃথিবীকে আবারও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন কিছু মানুষ। সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তেমনি একজন করোনাযোদ্ধা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঈসউজ্জামান।
ডা. রঈসউজ্জামান দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই শ্রীপুর উপজেলার করোনা রোগীদের সুস্থ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে সর্বপ্রথম বগুড়া জেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
মাগুরায় প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় শ্রীপুর উপজেলায়। বর্তমানে এ উপজেলায় চারজন করোনা রোগী রয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই হোম আইসোলেশনে আছেন। তাদেরকে সুস্থ করে তুলতে পরিবার-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ডা. রঈসউজ্জামান। আক্রান্ত রোগীদের দিচ্ছেন কার্যকরী পরামর্শ ও সেবা। এছাড়াও যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে তাদেরকেও সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
রঈসউজ্জামানের বাড়ি মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী গ্রামে। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি মেজো। বড় ভাই কামারখালী গার্লস স্কুলের সাবেক সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেছেন এবং ছোট বোন বিধবা। বাবা বিমান বাহিনীর ফ্লাইট সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং মা গৃহিণী। রঈসউজ্জামানের দুই কন্যা ও এক স্ত্রী রয়েছে। সুখের সংসারের মায়া তাকে আটকে রাখতে পারেনি। মানবতার টান ডা. রঈসউজ্জামানের মনোবলকে সুদৃঢ় করে দিয়েছে। পরিবারের সকল সদস্যরাও তাকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন সব সময়।
ডা. রঈসউজ্জামানের ৭৫ বসর বয়সী মা সুফিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলে একজন ডাক্তার। আমি তাকে ডাক্তারি পড়িয়েছি, ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করার জন্য, অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। আজ আমার ছেলে দেশের সেবা করার একটা বড় সুযোগ পেয়েছে। এটা আমার গর্ব। আমার ছেলে এই পরিস্থিতিতে মারা গেলেও আমি বুক ফুলিয়ে বলবো আমার ছেলে একজন যোদ্ধা ছিল, যে দেশ ও দেশের মানুষের ভালোর জন্য জীবন দিয়েছিল।
ডা. রঈসউজ্জামানের স্ত্রী মোছা. তানজিলা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, আমার দুই মেয়ে যখন দেখে তাদের বাবা পরিবারকে সময় না দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের দিন-রাত নানাভাবে সেবা দিচ্ছেন, তখন ওরাও দেশপ্রেম শেখে। বড় হয়ে তারা দেশের তরে কাজ করবে এটাই আমাদের চাওয়া।
করোনাযোদ্ধা ডা. রঈসউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মানুষের সেবা করাই আমার কাছে বড় ধর্ম। তাছাড়া আমি চাকরি করি। দেশের এই পরিস্থিতিতে আমি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবো না তো কে দাঁড়াবে? ডাক্তারি একটি সেবামূলক পেশা। আমি সেটাই করছি যেটা এখন দেশের মানুষ আমার কাছে থেকে আশা করছে।
আরাফাত হোসেন/আরএআর/জেআইএম