রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনার থাবা, আক্রান্ত ২
দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার শুরুতেই পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে লকডাউন করা হয়েছিল। সঙ্গে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতয়াত। প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হয় বাকি সব কার্যক্রম। লক্ষ্য একটাই, গাদাগাদি করে বাস করা সাড়ে ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের করোনার থাবা থেকে মুক্ত রাখা। দীর্ঘ দু’মাসেরও অধিক সময় রোহিঙ্গাদের করোনা মুক্ত রাখা গেলেও বৃহস্পতিবার সেখানেও থাবা বসিয়েছে করোনা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) ১৮৬ জনের নমুনা টেস্টে পজিটিভ আসা ১২ জনের মধ্যে ২ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীও রয়েছেন। আক্রান্ত দুই পুরুষ রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা। তাদের একজন উখিয়ার লম্বাশিয়া এলাকার ১ নম্বর পশ্চিম ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাকে আইওএম’র ২ নম্বর ক্যাম্পের পশ্চিম ব্লকে স্থাপিত আইসোলেশন হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অপরজন কুতুপালংয়ের (কপিপি) শরণার্থী। তাকেও এমএসএফ’র ওসিআই আইসোলেশন হাসপাতালে এনে চিকিৎসা সেবার আয়োজন করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু মো. তোহা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের পরিবারের সদস্য ও তাদের সংস্পর্শে আসা সকলকে চিহ্নিত করে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের ১৫ মে (শুক্রবার) স্যাম্পল সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠানো হবে বলে উল্লেখ করেন ডা. তোহা।
এদিকে বৃহস্পতিবার করোনা শনাক্ত হওয়াদের মাঝে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৯ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১ জন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ২ জন রয়েছেন। এদিন ১৮৬ জনের স্যাম্পল টেস্টের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৫ জন পুরাতন করোনা রোগীর ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বাকি ১৬৯ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। এনিয়ে কক্সবাজার জেলায় বৃহস্পতিবার (১৪ মে) পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩২ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৪ মে) পর্যন্ত কক্সবাজার মেডিকেলে ১৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেখানে ২ রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারের ১৩১ জন আর বান্দরবানের ৯ জন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ৭ জন রয়েছেন। চকরিয়ার এক রোগী ঢাকার পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন। তিনিসহ জেলায় আক্রান্ত ১৩২ জন।
অপরদিকে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর গত ৪৪ দিনে মোট ৩ হাজার ৩৬২ জনের নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। পজিটিভ আসাদের মাঝে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৩ জন। আর শনাক্ত হওয়ার ৭ ঘণ্টার মাথায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যান রামু উপজেলার কাউয়ার খোপ ইউনিয়নের পূর্ব কাউয়ার খোপ গ্রামের এক বৃদ্ধা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, করোনা জয় করতে হলে প্রথম দরকার সচেতনতা। যারা নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা দ্রুত সুস্থতার দিকে এগুচ্ছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব রোধ করতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমকেএইচ